Sunday, 5 July 2020

সমুদ্রতরঙ্গের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপঃ-


সমুদ্রতরঙ্গের ক্ষয়কার্যের ফলে তটভূমির ওপর ও উপকূলের উচ্চ পাড়ে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ তৈরী হয়। তরঙ্গের ক্ষয়কাজ ও ক্ষয়জনিত ভূমিরূপ উপকূলের গঠন, শিলার ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা, সমুদ্রের গভীরতা, তরঙ্গের শক্তি প্রভূতি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। 

সমুদ্রতরঙ্গের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল-
(ক) সমুদ্র-ভৃগু (Sea-Cliff), 
(খ) তরঙ্গকর্তিত মঞ্চ (Wave Out Platform), 
(গ) সামুদ্রিক গুহা (Sea Cave), 
(ঘ) ব্লো হোল (Blow Hole/Glupe), 
(ঙ) জিও (Geo/Yawn/Gorge), 
(চ) সামুদ্রিক খিলান (Sea Arch), 
(ছ) সামুদ্রিক স্তম্ভ বা স্ট্যাক বা স্কারী (Sea Pillar/Stack/Skerry), 
(জ) স্ট্যাম্প (Stamp)।

(ক) সমুদ্র-ভৃগু (Sea-Cliff):-
সংজ্ঞাঃ জার্মান শব্দ Cliff এর অর্থ হল 'উল্লম্ব শিলার সম্মুখ ভাগ'। সমুদ্রতরঙ্গের ক্রমাগত আঘাতে উপকূলের শিলাস্তর ক্ষয় পেয়ে যে খাড়া ঢাল বা খাঁজ সৃষ্টি করে, তাকে সমুদ্রভৃগু বলে।
বৈশিষ্ট্যঃ (i) ভৃগু তরঙ্গকর্তিত মঞ্চের উপর ঝুলে থাকে। (ii) ভৃগুঢাল সমুদ্রমুখী ও অমসৃণ হয়। (iii) সমুদ্রতরঙ্গের আঘাতে ভৃগুর পশ্চাৎসরণ ঘটে।
উদাহরণঃ বিশাখাপত্তনমের ডলফিন নোজ সমুদ্রভৃগুর উদাহরণ। 

(খ) তরঙ্গকর্তিত মঞ্চ (Wave Out Platform):-
সংজ্ঞাঃ সমুদ্রতরঙ্গের আঘাতে ভৃগুর পাদদেশে ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে পশ্চাৎভূমির দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং ক্ষয়িত পদার্থগুলি তটভূমির ওপর সঞ্চিত হয় এবং মৃদু ঢাল যুক্ত ভূমিরূপ গঠন করে, একে তরঙ্গকর্তিত মঞ্চ বলে। 
বৈশিষ্ট্যঃ (i) ভৃগুর ক্ষয়জাত পদার্থ দ্বারা এটি গঠিত হয়। (ii) সমুদ্রের দিকে মৃদু ঢালু হয়। (iii) এর বিস্তার ভৃগুর পশ্চাৎপসরণের ওপর নির্ভর করে। 
উদাহরণঃ কোঙ্কন উপকূলে ৮ কিমি দীর্ঘ তরঙ্গকর্তিত মঞ্চ দেখা যায়। 
(গ) সামুদ্রিক গুহা (Sea Cave):-
সংজ্ঞাঃ কঠিন শিলাস্তরে গঠিত সমুদ্রভৃগুর মধ্যে ফাটল বা দারুণ থাকলে কিংবা কোমল শিলায় গঠিত দুর্বল অংশ থাকলে সেই স্থান সমুদ্রতরঙ্গের ক্রমাগত আঘাতের ফলে দ্রুত ক্ষয় হয় এবং সেখানে গহ্বরের সৃষ্টি হয়, তাকে সামুদ্রিক গুহা বলে। 
বৈশিষ্ট্যঃ (i) গুহার দৈর্ঘ্য গড়ে ১০-৮০০ মিটারের বেশী হয়। (ii) গুহার দেওয়ালগুলি কঠিন শিলা দ্বারা তৈরী। 
উদাহরণঃ স্কটল্যান্ডের স্ট্যাফা দ্বীপের ফিঙ্গলজ কেভ বিখ্যাত সামুদ্রিক গুহার উদাহরণ। 


(ঘ) ব্লো হোল (Blow Hole/Glupe):-
সংজ্ঞাঃ সামুদ্রিক গুহার ছাদ সমুদ্রতরঙ্গের আঘাতে পাতলা হতে হতে অনেক সময় ধসে গিয়ে যে সংকীর্ণ উল্লম্ব গর্তের সৃষ্টি করে, তাকে ব্লো হোল এবং স্কটল্যান্ডে গ্লুপ বলে। 
বৈশিষ্ট্যঃ (i) এটি ভৃগুর পাদদেশ ও শীর্ষের মধ্যে সংযোগকারী প্রাকৃতিক উল্লম্ব গর্ত। (ii) এর মধ্যে দিয়ে গুহায় আবদ্ধ জল ও বায়ু সশব্দে ফোয়ারার মতো বাইরে বেরিয়ে আসে।
উদাহরণঃ ইংল্যান্ডের লিজার্ড উপদ্বীপের Lion's Den ব্লো হোলের উদাহরণ। 

(ঙ) জিও (Geo/Yawn/Gorge):
সংজ্ঞাঃ সামুদ্রিক গুহার ছাদের দুর্বল শিলা বরাবর একাধিক ব্লো হোল সৃষ্টি হলে একসময় গুহার ছাদ ধসে যায় এবং যে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ খাঁড়ির সৃষ্টি হয়, তাকে স্কটল্যান্ডে ও ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জে জিও বলে। 
বৈশিষ্ট্যঃ (i) জিও দীর্ঘ ও সংকীর্ণ প্রবেশপথের মতো হয়। (ii) তরঙ্গ ক্ষয় দ্বারা জিও প্রসারিত হলে খাঁড়ি সৃষ্টি করে। (iii) এগুলির মধ্যে দিয়ে জোয়ারের জল প্রবেশ করে। 
গুরুত্বঃ খাঁড়িতে মাছ ধরতে সুবিধা হয় এবং টারবাইন দ্বারা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যেমন- ফ্রান্সের লা-রাঁশ খাঁড়ি।
উদাহরণঃ স্কটল্যান্ড ও ফ্যারোস দ্বীপে জিও দেখা যায়। 

(চ) সামুদ্রিক খিলান (Sea Arch):-
সংজ্ঞাঃ সমুদ্রের দিকে অভিক্ষিপ্ত কোনো সংকীর্ণ অগ্রভূমির দু-দিকে সমুদ্রতরঙ্গের আঘাতে প্রথমে দুটি গুহার সৃষ্টি হয়। এই গুহা দুটির মাঝের অংশটুকু তরঙ্গের ক্রমাগত আঘাতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে একসময় গুহা দুটি মিলে একটি সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়। এই সুড়ঙ্গের উপরে গুহার ছাদটি খিলানের মতো অবস্থান করে। এরূপ খিলানকে আর্চ বা স্বাভাবিক সামুদ্রিক খিলান বলে। 
বৈশিষ্ট্যঃ (i) এই খিলান দাঁড়িয়ে থাকা হাতির মূর্তির মতো দেখতে লাগে। (ii) সামুদ্রিক খিলানের দৈর্ঘ্য প্রস্থের থেকে বেশি হলে তা সামুদ্রিক সুড়ঙ্গ নামে পরিচিত। (iii) এর উভয় দিক উন্মুক্ত হওয়ায় খিলানের মধ্যে দিয়ে সমুদ্রের জল যাওয়া-আসা করতে পারে। 
উদাহরণঃ ভারতের অন্ধপ্রদেশের তিরুমালাতে সামুদ্রিক খিলান দেখা যায়। 

(ছ) সামুদ্রিক স্তম্ভ বা স্ট্যাক বা স্কারী (Sea Pillar/Stack/Skerry): 
সংজ্ঞাঃ সমুদ্রতরঙ্গের ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে খিলান ধসে গিয়ে উপকূল রেখা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্তম্ভের আকারে দাঁড়িয়ে থাকে, একে স্ট্যাক বলা হয়। 
বৈশিষ্ট্যঃ (i) এই গুলি দেখতে বাড়ির থামের মতো। (ii) স্ট্যাকগুলো বেশি দিন স্থায়ী হয় না। (iii) স্বাভাবিক সামুদ্রিক খিলান ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে স্ট্যাক গঠিত হয়। 
উদাহরণঃ স্কটল্যান্ডের ওর্কনি দ্বীপের 'The Old Man of Hoy' (140m উঁচু) হল পৃথিবী বিখ্যাত একটি স্ট্যাক। 

(জ) স্ট্যাম্প (Stamp):-
সংজ্ঞাঃ সমুদ্রতরঙ্গের ক্রমাগত আঘাতে স্ট্যাকগুলির আয়তন ও উচ্চতা কমতে থাকে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় অবস্থান করে, এদের স্ট্যাম্প বলে। 
বৈশিষ্ট্যঃ (i) স্ট্যাম্পগুলি প্রধানত সমুদ্র তলদেশের নিম্নসীমায় অবস্থান করে। (ii) এগুলিকে কেবলমাত্র ভাটার সময় দেখা যায়। (iii) এর উচ্চতা স্ট্যাকের তুলনায় কম হয়। (iv) ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে স্ট্যাম্প সমুদ্রগর্ভে বিলান হতে পারে। 
উদাহরণঃ ভারতের গোয়া উপকূলে প্রচুর স্ট্যাম্প দেখা যায়।

No comments:

Post a Comment

West Bengal GK পশ্চিম বঙ্গ জিকে Part -03

  * পশ্চিম বঙ্গের প্রথম রাজ্যপালের নাম কি? # রাজাগোপালাচারী চক্রবর্তী। * পশ্চিম বঙ্গের প্রথম মহিলা রাজ্যপালের নাম কি? # শ্রীমতী পদ্মাজা নাইড...