Monday, 1 June 2020

বাংলা-ব্যাকরণ

পদের সংজ্ঞা ও প্রকরণ

দুঃসাহসী অভিযাত্রীরা মানুষের চিরন্তন কল্পনার রাজ্য চাঁদের দেশে পৌঁছেছেন এবং মঙ্গলগ্রহেও যাওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুত হচ্ছেন। উপরের বাক্যটিতে ‘রা’ (অভিযাত্রী+রা), ‘এর’ (মানুষ+এর), ‘র’ (কল্পনা+র), ‘এ’ (মঙ্গলগ্রহ+এ) প্রভৃতি চিহ্নগুলো বিভক্তি বলা হয়। বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দই এক একটি পদ। আলোচ্য বাক্যটিতে রয়েছে-

১. বিশেষ্য পদ    : অভিযাত্রী, মানুষ, কল্পনা, রাজা, দেশ, মঙ্গলগ্রহ

২. সর্বনাম পদ    : তাঁরা

৩. বিশেষণ পদ   : দুঃসাহসী, চিরন্তন, প্রস্তুত

৪. ক্রিয়া পদ        : পৌঁছেছেন, হচ্ছেন, যাওয়ার (অসমাপিকা ক্রিয়া)

৫. অব্যয় পদ       : এবং, জন্য

পদ প্রকরণ

পদ প্রধানত দুই প্রকার। যেমন : সব্যয় পদ ও অব্যয় পদ

সব্যয় পদ চার প্রকার। যেমন : ১. বিশেষ্য   ২. সর্বনাম            ৩. বিশেষণ           ৪. ক্রিয়া

পদ মোট পাঁচ প্রকার। যেমন :  ১. বিশেষ্য    ২. সর্বনাম            ৩. বিশেষণ           ৪. ক্রিয়া                                ৫. অব্যয়

বিশেষ্য পদের সংজ্ঞা ও প্রকরণ

কোনো কিছুর নামকে বিশেষ্য পদ বলে। বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি, বস্তু, স্থান, কাল, বার, কর্ম বা গুণের নাম বোঝানো হয় তাদের বিশেষ্য পদ বলে।

বিশেষ্য পদ ছয় প্রকার। যেমন :

১. নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য / Proper Noun

২. জাতিবাচক বিশেষ্য                / Common Noun

৩. বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য / Material Noun

৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য                 / Collective Noun

৫. ভাববাচক বিশেষ্য                / Verbal Noun

৬. গুণবাচক বিশেষ্য                 / Abstract Noun

নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য

যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, ভৌগোলিক স্থান, গ্রন্থ ইত্যাদির নাম বা সংজ্ঞা প্রকাশ পায় তাকে নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন :

ক) ব্যক্তির নাম               : নজরুল, ওমর, আনিস, মাইকেল

খ) ভৌগোলিক স্থানের       : ঢাকা, দিল্লি, লন্ডন, মক্কা

গ) ভৌগোলিক সংজ্ঞা        : (নদী, পর্বত, সমুদ্র ইত্যাদি)-মেঘনা, হিমালয়, আরব সাগর

ঘ) গ্রন্থের নাম                 : গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীণা, দেশে-বিদেশে, বিশ্বনবি

জাতিবাচক বিশেষ্য

যে পদ দ্বারা কোনো একজাতীয় প্রাণী বা পদার্থের সাধারণ নাম বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : মানুষ, গরু, পাখি, গাছ, পর্বত, নদী, ইংরেজ।

বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য

যে পদে কোনো উপাদানবাচক পদার্থের নাম বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে। এই জাতীয় বস্তুর সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। যেমন : বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, চাল, চিনি, লবণ, পানি।

সমষ্টিবাচক বিশেষ্য

যে পদে বেশকিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি বোঝায় তাই সমষ্টিবাচক বিশেষ্য যেমন : সভা, জনতা, সমিতি, পঞ্চায়েত, মাহফিল, ঝাঁক, বহর, দল।

ভাববাচক বিশেষ্য

যে বিশেষ্য পদে কোনো ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব প্রকাশিত হয় তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : গমন (যাওয়ার ভাব বা কাজ), দর্শন (দেখার কাজ), ভোজন (খাওয়ার কাজ), শয়ন (শোয়ার কাজ), দেখা, শোনা।

গুণবাচক বিশেষ্য

যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো বস্তুর দোষ বা গুণের নাম বোঝায় তাই গুণবাচক বিশেষ্য। যেমন :

মধুর মিষ্টত্বের গুণ-মধুরতা    তরল দ্রব্যের গুণ-তারল্য   তিক্ত দ্রব্যের দোষ বা গুণ-তিক্ততা    তরুণের গুণ-তারুণ্য

এরূপ : সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ।

সর্বনাম পদের সংজ্ঞা ও প্রকরণ

বিশেষ্যের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে। সর্বনাম সাধারণত ইতোপূর্বে ব্যবহৃত বিশেষ্যের প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দ। যেমন : হস্তী প্রাণিজগতের সর্ববৃহৎ প্রাণী। তার শরীরটি যেন বিরাট এক মাংসের স্তুপ। দ্বিতীয় বাক্যে ‘তার’ শব্দটি প্রথম বাক্যের ‘হস্তী’ বিশেষ্য পদটির প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই, ‘তার’ শব্দটি সর্বনাম পদ। বিশেষ্য পদ অনুক্ত থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ্য পদের পরিবর্তে সর্বনাম পদ ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন :

ক) যারা দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারে তারাই তো সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।

খ) ধান ভানতে যারা শিবের গীত গায় তারা স্থির লক্ষে পৌঁছেতে পারে না।

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সর্বনামকে ১০ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :

১. ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক         : আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা

২. আত্মবাচক      : স্বয়ং, নিজে, খোদ, আপনি

৩. সামীপ্যবাচক : এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি

৪. দূরত্ববাচক      : ঐ, ঐসব ইত্যাদি

৫. সাকুল্যবাচক : সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ

৬. প্রশ্নবাচক         : কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কিসে

৭. অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক        : কোন, কেহ, কেউ, কিছু

৮. ব্যতিহারিক     : আপনা আপনি, নিজে নিজে, আপসে, পরস্পর

৯. সংযোগজ্ঞাপক              : যে, যিনি, যাঁরা, যারা, যাহারা

১০. অন্যাদিবাচক              : অন্য, অপর, পর

সর্বনামের পুরুষের সংজ্ঞা ও প্রকরণ

‘পুরুষ’ একটি পারিভাষিক শব্দ। বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়ারই পুরুষ আছে। বিশেষণ ও অব্যয়ের পুরুষ নাই। যে কাজ করে অর্থাৎ কর্তাই পুরুষ।

ব্যাকরণে পুরুষ তিন প্রকার। যেমন :

১. উত্তম পুরুষ     : স্বয়ং বক্তাই উত্তম পুরুষ। আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের ইত্যাদি সর্বনাম শব্দ উত্তম পুরুষ।

২. মধ্যম পুরুষ   : প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের,

                         তোমাদিগকে, আপনি, আপনারা, আপনার, আপনাদের প্রভৃতি সর্বনাম শব্দ মধ্যম পুরুষ।

৩. নাম পুরুষ    : অনুপস্থিত অথবা পরোভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীই নাম পুরুষ। সে, তারা, তাহারা,

                       তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের প্রভৃতি নাম পুরুষ।

                       সমস্ত বিশেষ্য শব্দই নাম পুরুষ।

ব্যক্তিবাচক সর্বনামের রূপ

১. সাধারণ রূপ

উত্তম পুরুষ          : আমি, আমরা, আমাকে, আমাদিগকে, আমার, আমাদের, কবিতায় : মোর, মোরা

মধ্যম পুরুষ         : তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদিগকে, তোমার, তোমাদের

নাম পুরুষ             : সে, তারা, তাহারা, তাকে, তাহাকে

২. সম্ভ্রমাত্মক রূপ

মধ্যম পুরুষ         : আপনি, আপনারা, আপনাকে, আপনার, আপনাদের

নাম পুরুষ             : তিনি, তাঁরা, তাঁহারা, তাঁদের, তাঁহাদের, তাঁহাদিগকে, তাঁদেরকে, তাঁহাকে, তাঁকে, ইনি, এঁর, এঁরা, ইহাদের, এঁদের, ইহাকে এঁকে, উনি, ওঁর, ওঁরা, ওঁদের

৩. তুচ্ছার্থক বা ঘনিষ্ঠতাজ্ঞাপক রূপ

নাম পুরুষ             : ইহা, ইহারা, এই, এ, এরা, উহা, উহারা, ও, ওরা, ওদের

সর্বনামের বিভক্তিগ্রাহী রূপ

বাংলা সর্বনামসমূহ কর্তৃকারক ভিন্ন অন্যান্য কারকে বিভক্তিযুক্ত হওয়ার পূর্বে একটি বিশেষ রূপ পরিগ্রহ করে। সর্বনামের এ রূপটিকে বিভক্তিগ্রাহী রূপ বলা হয়। কর্তৃকারকে সর্বনামের মূল রূপটিই ব্যবহৃত হয় এবং একে প্রথমা বিভক্তিযুক্ত একবচন ধরা হয়। যেমন :

             কর্তৃকারকে প্রথমার একবচন                       অন্যান্য কারকে বিভক্তিগ্রাহী রূপ

সাধারণ              সম্ভ্রমাত্মক              তুচ্ছার্থক                সম্ভ্রমাত্মক             তুচ্ছার্থক

আমি                                                     

তুমি                      আপনি                   তুই                   আপনা             তোমা, তো

সে                         তিনি                  তাঁহা, তাঁ              তাহা, তা

যে                         যিনি                   যাঁহা, যাঁ               যাহা, যা

 ইনি                       এ                       ইহা, এ                ইহা, এ

 উনি                     উহা                      উহা, ওঁ                উহা, ও

কে, কি, কী           কে, কি, কী                                       কাহা, কা

সর্বনামের বিশিষ্ট প্রয়োগ

১. বিনয় প্রকাশ: বিনয় প্রকাশে উত্তম পুরুষের একবচনে দীন, অধম, বান্দা, সেবক, দাস প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন : ‘আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে’। ‘দীনের আরজ’।

২. ছন্দবদ্ধ কবিতা : ছন্দবদ্ধ কবিতায় সাধারণত ‘আমার’ স্থানে মম, ‘আমাদের’ স্থানে ‘মোদের’ এবং ‘আমরা’ স্থানে ‘মোরা’ ব্যবহৃত হয়। যেমন : কে বুঝিবে ব্যথা মম। মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি। বাংলা ভাষা’। ক্ষুদ্র শিশু মোরা, করি তোমারি বন্দনা।

৩. উপাস্যের প্রতি ভক্তি : উপাস্যের প্রতি সাধারণত ‘আপনি’ স্থানে ‘তুমি’ প্রযুক্ত হয়। যেমন : (উপাস্যের প্রতি ভক্ত) প্রভু, তুমি রক্ষা কর এ দীন সেবকে।

৪. অভিনন্দনপত্র : অভিনন্দনপত্র রচনায়ও অনেক সময় সম্মানিত ব্যক্তিকে ‘তুমি’ সম্বোধন করা হয়।

তুমি : ঘনিষ্ঠজন, আপনজন বা সমবয়স্ক সাথীদের প্রতি ব্যবহার্য।

তুই : তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত হয় এবং ঘনিষ্ঠতা বোঝাতেও আমরা তাই ব্যবহার করি।

সর্বনামে বিশেষ দ্রষ্টব্য/জ্ঞাতব্য

১. চলিত ভাষা : চলিত ভাষায় যেসব স্থানে সর্বনাম বসে সেসব হলো:

ক) তুচ্চার্থে : তাহা স্থানে তা       যাহা স্থানে যা         কাহা স্থানে কা         ইহা স্থানে এ       উহা স্থানে ও

খ) সম্ভ্রমার্থে (এগুলোর সাথে একটি চন্দ্রবিন্দু সংযোজিত হয়) :

  তাহা+দের=তাহাদের (সাধু)>তাদের (চলিত)          (সম্ভ্রমার্থে) তাঁহা+দের=তাঁহাদের (সাধু)>তাঁদের (চলিত)

২. করণ কারক : করণ কারকে অনুসর্গ ব্যবহারের পূর্বে মূল সর্বনাম শব্দের সঙ্গে র, এর বা কে বিভক্তি যোগ করে নিতে

     হয়। যেমন : তাহাকে দিয়া তাকে দিয়ে   তাহার দ্বারা      তার দ্বারা           আমাকে দিয়ে

৩. ষষ্ঠী বিভক্তি : ষষ্ঠী বিভক্তি অর্থে ঈয়-প্রত্যয়যুক্ত সর্বনামজাত বিশেষণ শুধু তৎসম সর্বনামের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। যেমন:

 মৎ+ঈয়=মদীয়   ভবৎ+ঈয়=ভবদীয়          তৎ+ঈয়=তদীয়

৪. ষষ্ঠী বিভক্তি : ‘কী’ সর্বনামটি কোনো কোনো কারকে ‘কিসে’ বা ‘কিসের’ (ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত) রূপ গ্রহণ করে। যেমন:

কী+দ্বারা=কিসের দ্বারা       কী+থেকে=কিসে থেকে কিসের থেকে

বিশেষণ পদের সংজ্ঞা

যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন : চলন্ত গাড়ি : বিশেষ্যের বিশেষণ। করূণাময় তুমি : সর্বনামের বিশেষণ। দ্রুত চল : ক্রিয়া বিশেষণ

বিশেষণ পদের প্রকরণ

বিশেষণ দুই ভাগে বিভক্ত। যেমন :

১. নাম বিশেষণ  : যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে তাকে নাম বিশেষণ বলে।

২. ভাববিশেষণ   : যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ভিন্ন অন্য পদকে  বিশেষিত করে তাই ভাব বিশেষণ।

নাম বিশেষণ

যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন :

বিশেষ্যের বিশেষণ            :               সুস্থ সবল দেহকে কে না ভালোবাসে?

সর্বনামের বিশেষণ            :               সে রূপবান ও গুণবান।

নাম বিশেষণকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :

ক) রূপবাচক        :               নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, কালো মেঘ

খ) গুণবাচক         :               চৌকস লোক, দক্ষ কারিগর, ঠান্ডা হাওয়া

গ) অবস্থাবাচক    :               তাজা মাছ, রোগা ছেলে, খোঁড়া পা

ঘ) সংখ্যাবাচক    :               হাজার লোক, দশ দশা, শ টাকা

ঙ) ক্রমবাচক        :               দশম শ্রেণি, সত্তর পৃষ্ঠা, প্রথমা  কন্যা

চ) পরিমাণবাচক :               বিঘাটেক জমি, পাঁচ শতাংশ ভূমি, হাজার টনী জাহাজ, এক কেজি চাল,   দুকিলোমিটার রাস্তা

ছ) অংশবাচক                  :               অর্ধেক সম্পত্তি, ষোল আনা দখল, সিকি পথ

জ) উপাদানবাচক             :               বেলে মাটি, মেটে কলসি, পাথুরে মূর্তি

ঝ) প্রশ্নবাচক                   :               কতদূর পথ? কেমন অবস্থা?

ঞ) নির্দিষ্টতাজ্ঞাপক          :               এই লোক, সেই ছেলে, ছাব্বিশে মার্চ

ভাববিশেষণ

যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ভিন্ন অন্য পদকে  বিশেষিত করে তাই ভাব বিশেষণ। ভাব বিশেষণ চার প্রকার। যেমন :

১. ক্রিয়া বিশেষণ : যে  পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন :

ক) ক্রিয়া সংগঠনের ভাব : ধীরে ধীরে বায়ু বয়।      

খ) ক্রিয়া সংগঠনের কাল : পরে একবার এসো।

২. বিশেষণীয় বিশেষণ : যে পদ নাম বিশেষণ অথবা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষিত করে তাকে বিশেষণীয় বিশেষণ বলে। যেমন :

ক) নাম বিশেষণের বিশেষণ            : সামান্য একটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত।

খ) ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ         : রকেট অতি দ্রুত চলে।

৩. অব্যয়ের বিশেষণ : যে ভাব বিশেষণ অব্যয় পদ অথবা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষিত করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যেমন : ধিক্ তারে, শত ধিক্ নির্লজ্জ যে জন।

৪. বাক্যের বিশেষণ : কখনো কখনো কোনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূূর্ণ বাক্যকে শেষিত করতে পারে তখন তাকে বাক্যের বিশেষণ বলা হয়। যেমন: দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন।

বিভিন্নভাবে বিশেষণ গঠন করা যায়। যেমন :

ক) ক্রিয়াজাত      :               হারানো সম্পত্তি, খাবার পানি, অনাগত দিন

খ) অব্যয়জাত     :               আচ্ছা মানুষ, উপরি পাওনা, হঠাৎ বড়লোক

গ) সর্বনাম জাত  :               কবেকার কথা, কোথাকার কে, স্বীয় সম্পত্তি

ঘ) সমাসসিদ্ধ       :               বেকার, নিয়ম-বিরুদ্ধ, জ্ঞানহারা চৌচালা ঘর

ঙ) বীপ্সামূলক     :               হাসিহাসি মুখ, কাঁদকাঁদ চেহারা, ডুবুডুবু নৌকা

চ) অনুকার অব্যয়জাত :     কনকনে শীত, শনশনে হাওয়া, ধিকিধিকি আগুন, টসটসে ফল, তকতকে মেঝে

ছ) কৃদন্ত                :               কৃতী সন্তান, জানাশোনা লোক, পায়েচলা পথ, হৃত সম্পত্তি, অতীত কাল

জ) তদ্ধিতান্ত        :               জাতীয় সম্পদ, নৈতিক বল, মেঠো পথ

ঝ) উপসর্গযুক্ত    :               নিখুঁত কাজ, অপহৃত সম্পদ, নির্জলা মিথ্যে

ঞ) বিদেশি          :               নাস্তানাবুদ অবস্থা, লাওয়ারিশ মাল, লাখেরাজ সম্পত্তি, দরপত্তনি তালুক

বিশেষণের অতিশায়নের সংজ্ঞা ও প্রকরণ

বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝিয়ে থাকে তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। যেমন : যমুনা একটি দীর্ঘ নদী, পদ্মা দীর্ঘতর কিন্তু মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। সূর্য, পৃথিবী ও চন্দ্রের মধ্যে তুলনায় সূর্য বৃহত্তম, পৃথিবী চন্দ্রের চেয়ে বৃহত্তর এবং চন্দ্র পৃথিবী অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর।

বিশেষণের অতিশায়ন দুই প্রকার। যেমন : বাংলা শব্দের অতিশায়ন ও তৎসম শব্দের অতিশায়ন

বাংলা শব্দের অতিশায়ন

১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়নে

বাংলা শব্দের অতিশায়নে দুয়ের মধ্যে চাইতে, চেয়ে, হইতে, হতে, অপেক্ষা, থেকে ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে দুয়ের মধ্যে তারতম্য বোঝাতে প্রথম বিশেষ্যটি প্রায়ই ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত হয়ে থাকে এবং মূল বিশেষণের পর কোনো পরিবর্তন সাধিত হয় না। যেমন : গরুর থেকে ঘোড়ার দাম বেশি। বাঘের চেয়ে সিংহ বলবান।

২. বহুর মধ্যে অতিশায়ন

অনেকের মধ্যে একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বোঝাতে মূল বিশেষণের কোনো পরিবর্তন হয় না। মূল বিশেষণের পূর্বে সবচাইতে, সবচেয়ে, সব থেকে, সর্বাপেক্ষা, সর্বাধিক প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার হয়। যেমন : নবম শ্রেণির ছাত্রদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান। ভাইদের মধ্যে বিমলই সবচাইতে বিচক্ষণ। পশুর মধ্যে সিংহ সর্বাপেক্ষা বলবান।

৩. দুটি বস্তুর মধ্যে অতিশায়ন

দুটি বস্তুর মধ্যে অতিশায়নে জোর দিতে হলে মূল বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম, অধিকতর প্রভৃতি বিশেষণীয় বিশেষণ যোগ করতে হয়। যেমন : পদ্মফুল গোলাপের চাইতে অনেক সুন্দর। ঘিয়ের চেয়ে দুধ বেশি উপকারী। কমলার চাইতে পাতিলেবু অল্প ছোট।

৪. ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত অতিশায়ন

কখনো কখনো ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত শব্দে ষষ্ঠী বিভক্তিই চেয়ে, থেকে প্রভৃতি শব্দের কার্যসাধন করে। যেমন : এ মাটি সোনার বাড়া।

তৎসম শব্দের অতিশায়ন

১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়ন

তৎসম শব্দের অতিশায়নে দুয়ের মধ্যে ‘তর’ এবং বহুর মধ্যে ‘তম’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে থাকে। যেমন : গুরু-গুরুতর-গুরুতম। দীর্ঘ-দীর্ঘতর-দীর্ঘতম। কিন্তু ‘তর’ প্রত্যয়যুক্ত বিশেষণটি শ্রুতিকটু হলে ‘তর’ প্রত্যয় যোগ না করে বিশেষণের পূর্বে ‘অধিকতর’ শব্দটি যোগ করতে হয়। যেমন : অশ্ব হস্তী অপেক্ষা অধিকতর সুশ্রী।

২. বহুর মধ্যে অতিশায়ন

বহুর মধ্যে অতিশায়নে তুলনীয় বস্তুর উল্লেখ না করেও ‘তম’ প্রত্যয় যুক্ত হতে পারে। যেমন : মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। দেশসেবার মহত্তম ব্রতই সৈনিকের দীক্ষা।

৩. দুয়ের মধ্যে তুলনায় অতিশায়ন ( ঈয়স-প্রত্যয় ও ইষ্ঠ-প্রত্যয়)

তৎসম শব্দের অতিশায়নে দুয়ের মধ্যে তুলনায় ঈয়স-প্রত্যয় এবং বহুর মধ্যে তুলনায় ইষ্ঠ-প্রত্যয় যুক্ত হয়। বাংলায় সাধারণত ঈয়স-প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলো ব্যবহৃত হয় না। যেমন :

মূল বিশেষণ                     দুয়ের তুলনায়                     বহুর তুলনায়

লগু                                    লঘিয়ান                               লঘিষ্ঠ

অল্প                    কনীয়ান (বাংলায় ব্যবহার নাই)                 কনিষ্ঠ

বৃদ্ধ                                     জ্যায়ান                                জ্যেষ্ঠ

শ্রেয়                                    শ্রেয়ান                                  শ্রেষ্ঠ

উদাহরণ : তিন ভাইয়ের মধ্যে রহিমই জ্যেষ্ঠ এবং করিম কনিষ্ঠ। সংখ্যাগুলোর লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক বের কর।

৪. ঈয়স-প্রত্যয়ান্ত শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ

ঈয়স-প্রত্যয়ান্ত কোনো কোনো শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ বাংলায় প্রচলিত আছে। যেমন : ভূয়সী প্রশংসা।

একই পদের বিশেষ্য ও বিশেষণ রূপে প্রয়োগ

বাংলা ভাষায় একই পদ বিশেষ্য ও বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন :

১. ভালো

বিশেষণ রূপে- ভালো বাড়ি পাওয়া কঠিন।

বিশেষ্য রূপে- আপন ভালো সবাই চায়।

২. মন্দ

বিশেষণ রূপে- মন্দ কথা বলতে নাই।

বিশেষ্য রূপে- এখানে কী মন্দটা তুমি দেখলে?

৩. পুণ্য

বিশেষণ রূপে- তোমার এ পূণ্য প্রচেষ্টা সফল হোক।

বিশেষ্য রূপে- পূণ্যে মতি হোক।

৪. নিশীথ

বিশেষণ রূপে- নিশীথ রাতে বাজছে বাঁশি।

বিশেষ্য রূপে- গভীর নিশীথে প্রকৃতি সুপ্ত।

৫. শীত

বিশেষণ রূপে- শীতকালে কুয়াশা পড়ে।

বিশেষ্য রূপে- শীতের সকালে চারদিক কুয়াশায় অন্ধকার।

৬. সত্য

বিশেষণ রূপে- সত্য পথে থেকে সত্য কথা বল।

বিশেষ্য রূপে- এ এক বিরাট সত্য।

অব্যয় পদের সংজ্ঞা ও প্রকরণ

ন ব্যয়=অব্যয়। যার ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না অর্থাৎ যা অপরিবর্তনীয় শব্দ তাই অব্যয়। অব্যয় শব্দের সাথে কোনো বিভক্তিচিহ্ন যুক্ত হয় না, সেগুলোর একবচন বা বহুবচন হয় না এবং সেগুলোর স্ত্রী ও পুরুষবাচকতা নির্ণয় করা যায় না।

যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থেকে কখনো বাক্যের শোভা বর্ধন করে, কখনো একাধিক পদের, বাক্যাংশের বা বাক্যের সংযোগ বা বিয়োগ সম্বন্ধ ঘটায় তাকে অব্যয় পদ বলে।

উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষায় তিন প্রকার অব্যয় শব্দ/পদ রয়েছে। যেমন :

১. বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হ্যাঁ, না ইত্যাদি।

২. তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্তুর ইত্যাদি। ‘এবং ও ‘সুতরাং’ তৎসম শব্দ হলেও বাংলায় এগুলোর অর্থ পরিবর্তিত হয়েছে। সংস্কৃতে ‘এবং’ শব্দের অর্থ এমন, আর ‘সুতরাং’ অর্থ অত্যন্ত, অবশ্য। কিন্তু=ও (বাংলা), সুতরাং=অতএব (বাংলা)

৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, শাবাণ, খাসা, মাইরি, মারহাবা ইত্যাদি।

ব্যবহার অনুসারে অব্যয় প্রধানত চার প্রকার। যেমন :

১. সমুচ্চয়ী অব্যয় (সংযোজক, বিয়োজক, সংকোচক)

২. অনন্বয়ী অব্যয়

৩. অনুসর্গ (বিভক্তিসূচক, বিভক্তিসম)

৪. অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়

বিবিধ উপায়ে গঠিত অব্যয় শব্দ

১. একাধিক অব্যয় শব্দযোগে : কদাপি, নতুবা, অতএব, অথবা ইত্যাদি।

২. আনন্দ বা দুঃখ প্রকাশক একই শব্দের দুইবার প্রয়োগে : ছি ছি, ধিক্ ধিক্ বেশ ইত্যাদি।

৩. দুটি ভিন্ন শব্দযোগে : মোটকথা, হয়তো, যেহেতু, নইলে

৪. অনুকার শব্দযোগে : কুহু কুহু, গুন গুন, ঘেউ ঘেউ, শন শন, ছল ছল, কন কন ইত্যাদি।

সমুচ্চয়ী অব্যয়

যে অব্যয় পদ একটি বাক্যের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যের অথবা বাক্যস্থিত একটি পদের সঙ্গে অন্য একটি পদের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায় তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বা সম্বন্ধবাচক অব্যয় বলে।

ক) সংযোজক অব্যয়

১. উচ্চপদ ও সামাজিক মর্যাদা সকলেই চায়। এখানে ‘ও’ অব্যয়টি বাক্যস্থিত দুটি পদের সংযোজন করছে।

২. তিনি সৎ, তাই সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। এখানে ‘তাই’ অব্যয়টি দুটি বাক্যের সংযোজন ঘটাচ্ছে।

    আর, অধিকন্তু, সুতরাং শব্দগুলোও সংযোজক অব্যয়।

খ) বিয়োজক অব্যয়

১. হাসেম কিংবা কাসেম এর জন্য দায়ী। এখানে ‘কিংবা’ অব্যয়টি দুটি পদের (হাসেম এবং কাসেমের) বিয়োগ

    সম্বন্ধ  ঘটাচ্ছে।

২. ‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন’। এখানে ‘কিংবা’ অব্যয়টি দুটি বাক্যাংশের বিয়োজক। আমরা চেষ্টা করেছি

     বটে কিন্তু কৃতকার্য হতে পারিনি। এখানে ‘কিন্তু’ অব্যয় দুটি বাক্যের বিয়োজক। বা, অথবা, নতুবা, না হয়,

     নয়তো শব্দগুলো বিয়োজক অব্যয়।

গ) সংকোচক অব্যয় : তিনি বিদ্বান অথচ সৎ ব্যক্তি নন। এখানে ‘অথচ’ অব্যয়টি দুটি বাক্যের মধ্যে ভাবের সংকোচ সাধন করেছে। কিন্তু, বরং শব্দগুলোও সংকোচক অব্যয়।

অনুগামী সমুচ্চয়ী অব্যয় : যে, যদি, যদিও, যেন প্রভৃতি কয়েকটি শব্দ সংযোজক অব্যয়ের কাজ করে থাকে। তাই তাদের অনুগামী সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। যেমন :

১. তিনি এত পরিশ্রম করেন যে তার স্বাস্থ্যভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা আছে।

২. আজ যদি (শর্তবাচক) পারি, একবার সেখানে যাব।

৩. এভাবে চেষ্টা করবে যেন কৃতকার্য হতে পার।  

অনন্বয়ী অব্যয়

যে সকল অব্যয় বাক্যের অন্য পদের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ না রেখে স্বাধীনভাবে নানাবিধ ভাব প্রকাশে ব্যবহৃত হয় তাদের অনন্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন :

ক) উচ্ছ্বাস প্রকাশে                          :               মরি মরি! কী সুন্দর প্রভাতের রূপ।

খ) স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপনে          :               হ্যাঁ, আমি যাব। না, আমি যাব না।

গ) সম্মতি প্রকাশে                           :               আমি আজ আলবত যাব। নিশ্চয়ই পারব।

ঘ) অনুমোদনবাচকতায়                    :               আপনি যখন বলছেন, বেশ তো আমি যাব।

ঙ) সমর্থনসূচক জবাবে                     :               আপনি যা জানেন তা তো ঠিকই বটে।

চ) যন্ত্রণা প্রকাশে                             :               উঃ! পায়ে বড্ড লেগেছে। নাঃ! এ ক অসহ্য।

ছ) ঘৃণা বা বিরক্তি প্রকাশে                 :               ছি ছি! তুমি এত নীচ। কী আপদ! লোকটা যে পিছু ছাড়ে না।

জ) সম্বোধনে                                 :               ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।

ঝ) সম্ভাবনায়                                :               সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে।

ঞ) বাক্যালংকার অব্যয়                   :               কয়েকটি অব্যয় শব্দ নিরর্থকভাবে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের শোভাবর্ধন করে, এদের বাক্যালংকার অব্যয় বলে। যেমন :

১. কত না হারানো স্মৃতি জাগে আজও মনে।

২. হায়রে ভাগ্য, হায়রে লজ্জা, কোথায় সভা, কোথায় সজ্জা।

অনুসর্গ অব্যয়

যে সকল অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বিভক্তির ন্যায় বসে কারকবাচকতা প্রকাশ করে তাদের অনুসর্গ অব্যয় বলে। যেমন : ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না। (দিয়ে অনুসর্গ অব্যয়)। অনুসর্গ অব্যয় ‘পদান্বয়ী অব্যয়’ নামেও পরিচিত।

অনুসর্গ অব্যয় দুই প্রকার। যেমন : বিভক্তিসূচক অনুসর্গ অব্যয় ও বিভক্তিসম অনুসর্গ অব্যয়

অনুকার অব্যয়

যে সকল অব্যয় অব্যক্ত রব, শব্দ বা ধ্বনির অনুকরণে গঠিত হয় তাদের অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বলে। যেমন :

বজ্রের ধ্বনি  : কড় কড়    মেঘের গর্জন : গুড় গুড়       বৃষ্টির তুমূল শব্দ : ঝম ঝম      সিংহের গর্জন : গর গর

স্রোতের ধ্বনি : কল কল    ঘোড়ার ডাক  : চিহি চিহি     বাতাসের গতি : শন শন    কাকের ডাক : কা কা

শুষ্ক পাতার শব্দ : মর মর  কোকিলের ডাক : কুহু কুহু    নুপূরের আওয়াজ : রুম ঝুম      চুড়ির শব্দ : টুং টাং

অনুভূতিমূলক অব্যয়ও অনুকার অব্যয়ের শ্রেণিভূক্ত। যেমন : ঝাঁ ঝাঁ (প্রখরতাবাচক), খাঁ খাঁ (শূন্যতাবাচক), কচ কচ, কট কট, টল মল, ঝল মল, চক চক, ছম ছম, টন টন, খট খট ইত্যাদি।

অব্যয় বিশেষণ

কতগুলো অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হলে নামবিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণ ও বিশেষণীয় বিশেষণের অর্থবাচকতা প্রকাশ করে থাকে। এদের অব্যয় বিশেষণ বলা হয়। যেমন :

নামবিশেষণ         : অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ

ভাব বিশেষণ       : আবার যেতে হবে

ক্রিয়াবিশেষণ      : অন্যত্র চলে যায়

নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয়

কতগুলো যুগ্মশব্দ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল সেগুলো নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় রূপে পরিচিত। যেমন : যেমন, তথা, যত-তত, যখন-তখন, যেমন- তেমন, যেরূপ-সেরূপ ইত্যাদি। যথা ধর্ম তথা জয়। যত গর্জে তত বর্ষে না।

ত-প্রত্যয়ান্ত অব্যয় (সংস্কৃত তস্)

ত-প্রত্যয়ান্ত অব্যয় বাংলায় ব্যবহৃত হয়। যেমন : ধর্মত বলছি। দুর্ভাগ্যবশত পরীক্ষায় ফেল করেছি। অন্তত তোমার যাওয়া উচিত। জ্ঞানত মিথ্যা বলিনি।

একই অব্যয় শব্দের বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার

১. আর

পুনরাবৃত্তির অর্থে    : ও দিকে আর যাব না।

নির্দেশ অর্থে         : বল, আর কী চাও?

নিরাশায়              : সে দিন কি আর আসবে?

বাক্যালংকারে       : আর কি বাজবে বাঁশি?

২. ও

সংযোগ অর্থে       : করিম ও রহিম দুই ভাই।

সম্ভাবনায়            : আজ বৃষ্টি হতেও পারে।

তুলনায়               : ওকে বলাও যা, না বলা তা।

স্বীকৃতি জ্ঞাপনে     : খেতে যাবে? গেলেও হয়।

হতাশা জ্ঞাপনে      : এত চেষ্টাতেও হলো না।

৩. কি/কী

জিজ্ঞাসায়            : তুমি কি বাড়ি যাচ্ছ?

বিরক্তি প্রকাশে      : কী বিপদ, লোকটা যে পিছু ছাড়ে না।

সাকুল্য অর্থে         : কি আমীর কি ফকির, একদিন সকলকেই যেতে হবে।

বিড়ম্বনা প্রকাশে: তোমাকে নিয়ে কী মুশকিলেই না পড়লাম।

৪. না

নিষেধ অর্থে                        : এখন যেও না।

বিকল্প প্রকাশে                    : তিনি যাবেন, না হয় আমি যাব।

আদর প্রকাশে বা অনুরোধে     : আর একটি মিষ্টি খাও না খোকা। আর একটা গান গাও না।

সম্ভাবনায়                           : তিনি না কি ঢাকায় যাবেন।

বিস্ময়ে                               : কী করেই না দিন কাটাচ্ছ।

তুলনায়                               : ছেলে তো না, যেন একটা হিটলার।

৫. যেন

উপমায়                               : মুখ যেন পদ্মফুল।

প্রার্থনায়                              : খোদা যেন তোমার মঙ্গল করেন।

তুলনায়                              : ইস্, ঠান্ডা, যেন বরফ।

অনুমানে                              : লোকটা যেন আমার পরিচিত মনে হলো।

সতর্ককরণে                          : সাবধানে চল, যেন পা পিছলে না পড়।

ব্যঙ্গ প্রকাশে                         : ছেলে তো নয় যেন ননীর পুতুল।

ক্রিয়াপদের সংজ্ঞা, প্রকরণ ও গঠন

১. কবির বই পড়ছে।

২. তোমরা আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।

‘পড়ছে’ ও ‘দেবে’ পদ দুটো দ্বারা কোনো কার্য সম্পাদন করা বোঝাচ্ছে বলে এরা ক্রিয়াপদ।

যে পদের দ্বারা কোনো কার্য সম্পাদন করা বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে।

বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোনো পুরুষ কর্তৃক নির্দিষ্ট কালে কোনো কার্যের সংঘটন বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। ওপরের প্রথম উদাহরণে নাম পুরুষ ‘কবির’ কর্তৃক বর্তমান কালে ‘পড়া’ কার্যের সংঘটন প্রকাশ করছে। দ্বিতীয় উদাহরণে মধ্যম পুরুষ, ‘তোমরা’ ভবিষ্যত ক্রিয়া সংঘটনের সম্ভাবনা প্রকাশ করছে।

বিবিধ অর্থে ক্রিয়াপদকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন :

১. ভাবপ্রকাশ ক্রিয়া : ভাব প্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়াপদ ২ প্রকার। যেমন : সমাপিকা ক্রিয়া, অসমাপিকা ক্রিয়া

২. বিবিধ : অন্যান্যভাবে ক্রিয়াপদ ৬ প্রকার। যেমন : অকর্মক, সকর্মক  দ্বিকর্মক, প্রযোজক ক্রিয়া, যৌগিক ক্রিয়া, মিশ্র ক্রিয়া

ক্রিয়াপদের গঠন

ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করতে হয়। যেমন: ‘পড়ছে’-পড় ‘ধাতু’+‘ছে’ বিভক্তি।

সকল ক্রিয়াপদের সংজ্ঞা

১. ক্রিয়া                : যে শব্দ দিয়ে কাজ বুঝায় তাকে ক্রিয়া বলে।

২. অনুক্ত ক্রিয়া       : যে বাক্যে ক্রিয়া উহ্য থাকে তাকে অনুক্ত ক্রিয়া বলে।

৩. সমাপিকা ক্রিয়া    : যে ক্রিয়া বাক্যকে সমাপ্ত করে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।

৪. অসমাপিকা ক্রিয়া  : যে ক্রিয়া বাক্যকে সমাপ্ত করতে পারে না তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।

৫. সকর্মক ক্রিয়া        : যে ক্রিয়ার কর্মপদ থাকে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।

৬. অকর্মক ক্রিয়া        : যে বাক্যে কোনো কর্মপদ থাকে না তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।

৭. দ্বিকর্মক ক্রিয়া         : যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে।

৮. সমধাতুজ/ধাত্বর্থক    : যে বাক্যে ক্রিয়া ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে তৈরি তাকে সমধাতুজ/ধাত্বর্থক কর্ম বলে।

৯. প্রযোজক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া প্রযোজনা করে তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।

১০. নামধাতু        : বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে আ-প্রত্যয়যোগে গঠিত ধাতুকে নামধাতু বলে।

১১. যৌগিক ক্রিয়া : সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া দিয়ে গঠিত বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশক ক্রিয়াকে যৌগিক  ক্রিয়া বলে।

১২. মিশ্রক্রিয়া     : বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর, হ, দে, পা, যা, কাট, গা, ছাড়, ধর, মার  ইত্যাদি ধাতু দিয়ে গঠিত ক্রিয়াকে মিশ্রক্রিয়া বলে।

অনুক্ত ক্রিয়াপদ

ক্রিয়াপদ বাক্যগঠনের অপরিহার্য অঙ্গ। ক্রিয়াপদ ভিন্ন কোনো মনোভাবই সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায় না। তবে কখনো কখনো বাক্যে ক্রিয়াপদ উহ্য বা অনুক্ত থাকতে পারে। যেমন :

ইনি আমার ভাই   = ইনি আমার ভাই (হন)।

আজ প্রচণ্ড গরম   = আজ প্রচণ্ড গরম (অনুভূত হচ্ছে)

তোমার মা কেমন?= তোমার মা কেমন (আছেন)?

বাক্যে সাধারণত ‘হু’ ও ‘আছ’ ধাতু গঠিত ক্রিয়াপদ উহ্য থাকে।

সমাপিকা ক্রিয়া

যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের (মনোভাবের) পরিসমাপ্তি জ্ঞাপিত হয় তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন : ছেলেরা খেলা করছে। এ বছর বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

সমাপিকা ক্রিয়া সকর্মক, অকর্মক ও দ্বিকর্মক হতে পারে। ধাতুর সঙ্গে বর্তমান, অতীত বা ভবিষ্যত কালের বিভক্তি যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন :

*রশ্মিকা বই পড়ে। এখানে ক্রিয়া-সকর্মক আর কাল-বর্তমান

*বুল্টি সারাদিন খেলেছিল। এখানে ক্রিয়া-অকর্মক আর কাল-অতীত

* আমি তোমাকে একটি কলম উপহার দেব। এখানে ক্রিয়া-দ্বিকর্মক আর কাল-ভবিষ্যত

অসমাপিকা ক্রিয়া

যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন : প্রভাতে সূর্য উঠলে ...। আমরা হাত-মুখ ধুয়ে ...। আমরা বিকেলে খেলতে ...। এখানে, ‘উঠলে’ ‘ধুয়ে’ ও ‘খেলতে’ ক্রিয়াপদগুলোর দ্বারা কথা শেষ হয়নি। কথা সম্পূর্ণ হতে আরও শব্দের প্রয়োজন। তাই এর শব্দগুলো অসমাপিকা ক্রিয়া। উপযুক্ত বাক্যগুলো পূর্ণ মনোভাব জ্ঞাপন করলে দাঁড়াবে : প্রভাতে সূর্য উঠলে অন্ধকার দূর হয়। আমরা হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসলাম। আমরা বিকেলে খেলতে যাই। পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করতে হলে সমাপিকা ক্রিয়া অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত ইয়া (পড়িয়া), ইলে (পড়িলে), ইতে (পড়িতে), এ (পড়ে), লে (পড়লে), তে (পড়তে) বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়াপদ অসমাপিকা ক্রিয়া।

অসমাপিকা ক্রিয়ার গঠন

ধাতুর সঙ্গে কাল নিরপেক্ষ-ইয়া (য়ে),-ইতে (তে) অথবা ইলে (লে বিভক্তি যুক্ত হয়ে অসমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন : ‘দরিদ্র পাইলে ধন হয় গর্বস্ফীত।’ যত্ন করলে রত্ন মেলে। তাকে খুঁজে নিয়ে আসতে চেষ্টা করবে। 

ধাতুর ক্রিয়া ঘটিত বাক্যে একাধিক প্রকার কর্তা (কর্তৃকারক) দেখা যায়। যেমন :

এক কর্তা

বাক্যস্থিত সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা এক বা অভিন্ন হতে পারে। যেমন : তুমি চাকরি পেলে আর কি দেশে আসবে? ‘পেলে’ (অসমাপিকা ক্রিয়া) এবং ‘আসবে’ (সমাপিকা ক্রিয়া) উভয় ক্রিয়ার কর্তা এখানে ‘তুমি’।

অসমান কর্তা

বাক্যস্থিত সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা এক না হলে সেখানে কর্তাকে অসমান কর্তা বলা হয়। যেমন :

শর্তাধীন কর্তা

এ জাতীয় কর্তাদের ব্যবহার শর্তাধীন হতে পারে। যেমন : তোমরা বাড়ি এলে আমি রওনা হব। এখানে ‘এলে’ অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা ‘তোমরা’ এবং ‘রওনা হব’ সমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা ‘আমি’। তোমাদের বাড়ি আসার ওপর আমার রওনা হওয়া নির্ভরশীল বলে এ জাতীয় বাক্যে কর্তৃপক্ষেও ব্যবহার শর্তাধীন।

নিরপেক্ষ কর্তা

শর্তাধীন না হয়েও সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপদ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম কর্তৃপদটিকে  বলা হয় নিরপেক্ষ কর্তা। যেমন : সূর্য অস্তমিত হলে যাত্রীদল পথ চলা শুরু করল। এখানে ‘যাত্রীদের’ পথ চলার সঙ্গে ‘সূর্য’ অস্তমিত হওয়ার কোনো শর্ত বা সম্পর্ক নাই বলে ‘সূর্য’ নিরপেক্ষ কর্তা।

অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার

১. ‘ইলে’>‘লে’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার

ক) কার্যপরম্পরা বোঝাতে      :               চারটা বাজলে স্কুলের ছুটি হবে।

খ) প্রশ্ন বা বিস্ময় জ্ঞাপনে      :               একবার মরলে কি কেউ ফেরে?

গ) সম্ভাব্যতা অর্থে              :               এখন বৃষ্টি হলে ফসলের ক্ষতি হবে।

ঘ) সাপেক্ষতা বোঝাতে        :               তিনি গেলে কাজ হবে।

ঙ) দার্শনিক সত্য প্রকাশে     :               জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?

চ) বিধিনির্দেশে                 :               এখানে প্রচারপত্র লাগালে  ফৌজদারিতে সোপর্দ হবে।

ছ) সম্ভাবনার বিকল্পে        :               আজ গেলেও যা, কাল  গেলেও তা।

জ) পরিণতি বোঝাতে         :               বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি হবে।

২. ‘ইয়া’>‘এ’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার

ক) অনন্তরতা বা পর্যায় বোঝাতে    :               হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বস।

খ) হেতু অর্থে                            :               ছেলেটি কুসঙ্গে মিশে নষ্ট হয়ে গেল।

গ) ক্রিয়া বিশেষণ অর্থে               :               চেঁচিয়ে কথা বলো না।

ঘ) ক্রিয়ার অবিচ্ছিন্নতা বোঝাতে    :               হৃদয়ের কথা কহিয়া কহিয়া গাহিয়া গান।

ঙ) ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে         :               সেখানে আর গিয়ে কাজ নাই।

চ) অব্যয় পদেও অনুরূপ             :               ঢাকা গিয়ে বাড়ি যাব।

৩. ‘ইতে’>‘তে’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার

ক) ইচ্ছা প্রকাশে                       :               এখন আমি যেতে চাই।

খ) উদ্দেশ্য বা নিমিত্ত অর্থে           :               মেলা দেখতে ঢাকা যাব।

গ) সামর্থ্য বোঝাতে                   :               খোকা এখন হাঁটতে পারে।

ঘ) বিধি বোঝাতে                      :               বাল্যকালে বিদ্যাভ্যাস করতে হয়।

ঙ) দেখা বা জানা অর্থে               :               রমলা গাইতে জানে।

চ) আবশ্যকতা বোঝাতে             :               এখন ট্রেন ধরতে হবে।

ছ) সূচনা বোঝাতে                    :               রানি এখন ইংরেজি পড়তে শিখেছে।

জ) বিশেষণবাচকতায়                :               লোকটাকে দৌড়াতে  দেখলাম।

ঝ) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে       :               তোমাকে তো এ গ্রামে থাকতে দেখিনি।

ঞ) অনুসর্গরূপে                       :               কোন দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শ্যামল।

ট) বিশেষ্যেও সঙ্গে অন্বয় সাধনে    :               দেখিতে বাসনা মাগো তোমার চরণ।

ঠ) বিশেষণের সঙ্গে অন্বয় সাধনে    :               পদ্মফুল দেখতে সুন্দর।

৪.  ‘ইতে’>‘তে’ বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়ার দ্বিত্ব প্রয়োগ

ক) নিরন্তরতা প্রকাশে        :               কাটিতে কাটিতে ধান এলো বরষা।

খ) সমকাল বোঝাতে         :               সেঁউতিতে পদ দেবী রাখিতে রাখিতে।

                                                   সেঁউতি হইল সোনা দেখিতে দেখিতে।

টীকা : রীতিসিদ্ধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমাপিকা ক্রিয়া অনুপস্থিত থেকে অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহারে বাক্য গঠিত হতে পারে। যেমন : গরু মেরে জুতা দান।  আঙুল ফুলে কলাগাছ।

সকর্মক ক্রিয়া

যে ক্রিয়ার কর্মপদ আছে তাই সকর্মক ক্রিয়া। ক্রিয়ার সাথে কী বা কাকে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই ক্রিয়ার কর্মপদ। কর্মপদযুক্ত ক্রিয়াই সকর্মক ক্রিয়া। যেমন : বাবা আমাকে একটি কলম কিনে দিয়েছেন।

প্রশ্ন : কী দিয়েছেন? উত্তর : কলম (কর্মপদ)

প্রশ্ন : কাকে দিয়েছেন? উত্তর : আমাকে (কর্মপদ)

‘দিয়েছেন’  ক্রিয়াপদটির কর্ম পদ থাকায় এটি সকর্মক ক্রিয়া।

অকর্মক ক্রিয়া

যে ক্রিয়ার কর্ম নাই, তা অকর্মক ক্রিয়া। যেমন : মেয়েটি হাসে। ‘কী হাসে’ বা ‘কাকে হাসে’ প্রশ্ন করলে কোন উত্তর হয় না। কাজেই ‘হাসে’ ক্রিয়াটি অকর্মক ক্রিয়া।

দ্বিকর্মক ক্রিয়া

যে ক্রিয়ার দুটি কর্মপদ থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। দ্বিকর্মক ক্রিয়ার বস্তুবাচক কর্মপদটিকে মুখ্য বা প্রধান কর্ম এবং ব্যক্তিবাচক কর্মপদটিকে গৌণকর্ম বলে। বাবা আমাকে একটি কলম কিনে দিয়েছেন বাক্যে ‘কলম’ (বস্তু) মুখ্যকর্ম এবং ‘আমাকে’ (ব্যক্তি) গৌণকর্ম।

সমধাতুজ কর্ম

বাক্যের ক্রিয়া ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে গঠিত হলে ঐ কর্মপদকে সমধাতুজ কর্ম বা ধাত্বর্থক কর্মপদ বলে। যেমন : আর কত খেলা খেলবে। মূল ‘খেলা’ ধাতু থেকে ক্রিয়াপদ ‘খেলবে’ এবং কর্মপদ ‘খেলা’ উভয়ই গঠিত হয়েছে। তাই ‘খেলা’ পদটি সমধাতুজ বা ধাত্বর্থক কর্ম।

সমধাতুজ কর্মপদ অকর্মক ক্রিয়াকে সকর্মক করে। যেমন :

এমন সুখের মরণ কে মরতে পারে?          বেশ এক ঘুম ঘুমিয়েছি।         আর  মায়াকান্না কেঁদো না গো বাপু।

সকর্মক ক্রিয়ার অকর্মক রূপ

প্রয়োগ বৈশিষ্ট্য সকর্মক ক্রিয়া ও অকর্মক হতে পারে। যেমন :

         অকর্মক                                    সকর্মক

আমি চোখে দেখি না।                    আকাশে চাঁদ দেখি না।

ছেলেটা কানে শোনে না।                 ছেলেটা কথা শোনে।

আমি রাতে খাব না।                     আমি রাতে ভাত খাব না।

অন্ধকারে আমার খুব ভয় করে।      বাবাকে আমার খুব ভয় করে।

প্রযোজক ক্রিয়া

যে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনা বা চালনায় অন্য কর্তৃক অনুষ্ঠিত হয় সেই ক্রিয়াকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। সংস্কৃত ব্যাকরণে একে ণিজন্ত ক্রিয়া বলা হয়।

প্রযোজক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া প্রযোজনা করে তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।

প্রযোজ্য কর্তা : যাকে দিয়ে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হয় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন :

প্রযোজক কর্তা     প্রযোজ্য কর্তা       প্রযোজক ক্রিয়া

মা                        শিশুকে              চাঁদ দেখাচ্ছেন।

(তুমি)                    খোকাকে            কাঁদিও না।

 সাপুড়ে                    সাপ                খেলায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য বা জ্ঞাতব্য : প্রযোজক ক্রিয়া রূপে ব্যবহৃত হলে অকর্মক প্রযোজক ক্রিয়া সকর্মক হয়।

প্রযোজক ক্রিয়ার গঠন : প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু=মূল ক্রিয়ার ধাতু+আ। যেমন : মূল ধাতু sqrtহাস্+আ=হাসা (প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু)। হাসা+চ্ছেন বিভক্তি=হাসাচ্ছেন (প্রযোজক ক্রিয়া)।

নামধাতু ও নামধাতুর ক্রিয়া

বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয়যোগে যেসব ধাতু গঠিত হয় তাদের নামধাতু বলা হয়। নামধাতুর সঙ্গে পুরুষ বা কালসূচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগে নামধাতুর ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন:

ক) বেত (বিশেষ্য)+আ (প্রত্যয়)=বেতা          : শিক্ষক ছাত্রটিকে বেতাচ্ছেন

খ) বাঁকা (বিশেষণ)+আ (প্রত্যয়)=বাঁকা        : কঞ্চিটি বাঁকিয়ে ধর

গ) ধ্বন্যাত্মক অব্যয়          : কন কন-দাঁতটি ব্যথায় কনকনাচ্ছে। ফোঁস অজাকারটি ফোঁসাচ্ছে।

আ-প্রত্যয় যুক্ত না হয়েও কয়েকটি নামধাতু বাংলা ভাষায় মৌলিক ধাতুর মতো ব্যবহৃত হয়। যেমন :

ফল        : বাগানে বেশ কিছু লিচু ফলেছে।     

টক          : তরকারি বাসি হলে টকে।   

ছাপা       : আমার বন্ধু বইটা ছেপেছে।

যৌগিক ক্রিয়া

একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া যদি একত্রে একটি বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন :

ক) তাগিদ দেওয়া অর্থে    :               ঘটনাটা শুনে রাখ।

খ) নিরন্তরতা অর্থে             :               তিনি বলতে লাগলেন।

গ) কার্যসমাপ্তি অর্থে           :               ছেলেমেয়েরা শুয়ে পড়ল।

ঘ) আকস্মিকতা অর্থে        :               সাইরেন বেজে উঠল।

ঙ) অভ্যস্ততা অর্থে              :               শিক্ষায় মন সংস্কারমুক্ত হয়ে থাকে।

চ) অনুমোদন অর্থে            :               এখন যেতে পার।

যৌগিক ক্রিয়ার গঠন বিধি

অসমাপিকা ক্রিয়ার পরে যা, পড়, দেখ্, লাগ্, ফেল্, আস্, উঠ্, দে, লহ, থাক প্রভৃতি ধাতু থেকে সমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়ে উভয়ে মিলিতভাবে যৌগিক ক্রিয়া তৈরি করে। এসব যৌগিক ক্রিয়া বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। যেমন :

১. যা- ধাতু

ক) সমাপ্তি অর্থে                  :               বৃষ্টি থেমে গেল।

খ) অবিরাম অর্থে                 :              গায়ক গেয়ে যাচ্ছেন।

গ) ক্রমশ অর্থে                   :               চা জুড়িয়ে যাচ্ছে।

ঘ) সম্ভাবনা অর্থে                :               এখন যাওয়া যেতে পারে।

২. পড়-ধাতু        

ক) সমাপ্তি অর্থে                  :               এখন শুয়ে পড়।

খ) ব্যাপ্তি অর্থে                    :               কথাটা ছড়িয়ে পড়েছে।

গ) আকস্মিকতা অর্থে           :               এখনই তুফান এসে পড়বে।

ঘ) ক্রমশ অর্থে                   :               কেমন যেন মনমরা হয়ে পড়েছি।

৩. দেখ্-ধাতু

ক) মনোযোগ আকর্ষণে:   এদিকে চেয়ে দেখ।

খ) পরীক্ষা অর্থে                  :               লবণটা চেখে দেখ।

গ) ফল সম্ভাবনায়               :               সাহেবকে বলে দেখ।

৪. আস্- ধাতু

ক) সম্ভাবনায়                     :               আজ বিকেলে বৃষ্টি আসতে পারে।

খ) অভ্যস্ততায়                    :               আমরা এ কাজই করে আসছি।

গ) আসন্ন সমাপ্তি অর্থে:     ছুটি ফুরিয়ে আসছে।

৫. দি- ধাতু

ক) অনুমতি অর্থে                :               আমাকে যেতে দাও।

খ) পূর্ণতা অর্থে                   :               কাজটা শেষ করে দিলাম।

গ) সাহায্য প্রার্থনায়             :               আমাকে অঙ্কটা বুঝিয়ে দাও।

৬. নি- ধাতু

ক) নির্দেশ জ্ঞাপনে              :               এবার কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নাও।

খ) পরীক্ষা অর্থে                 :               কষ্টি পাথরে সোনাটা কষে নাও।

৭. ফেল্- ধাতু      

ক) সম্পূর্ণতা অর্থে              :               সন্দেশগুলো খেয়ে ফেল।

খ) আকস্মিকতা অর্থে          :               ছেলেরা হেসে ফেলল।

৮. উঠ্-ধাতু

ক) ক্রমান্বয়তা বোঝাতে:  ঋণের বোঝা ভারী হয়ে উঠছে।

খ) অভ্যাস অর্থে               :               শুধু শুধু তিনি রেগে ওঠেন।

গ) আকস্মিকতা অর্থে         :               সে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল।

ঘ) সম্ভাবনা অর্থে              :               আমার আর থাকা হয়ে উঠল না।

ঙ. সামর্থ্য অর্থে                :               এসব কথা আমার সহ্য হয়ে ওঠে না।

৯. লাগ্-ধাতু

ক) অবিরাম অর্থে              :               খোকা কাঁদতে লাগল।

খ) সূচনা নির্দেশে              :               এখন কাজে লাগ তো দেখি।

১০. থাক্-ধাতু

ক) নিরন্তরতা অর্থে            :               এবার ভাবতে থাক।

খ) সম্ভবনায়                    :               তিনি হয়তো বলে থাকবেন।

গ) সন্দেহ প্রকাশে             :             সে-ই কাজটা করে থাকবে।

ঘ) নির্দেশে                      :               আর সরকার নাই, এবার বসে থাক।

মিশ্র ক্রিয়া

বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, হ্, দে, পা, যা, কাট্, গা, ছাড়, ধর্, মার্, প্রভৃতি ধাতুযোগে গঠিত ক্রিয়াপদ বিশেষ বিশেষ অর্থে মিশ্র ক্রিয়া গঠন করে। যেমন :

ক) বিশেষ্যের উত্তর (পরে)                         :               আমরা তাজমহল দর্শন করলাম। এখন গোল্লায় যাও।

খ) বিশেষণের উত্তর (পরে)                        :               তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম।

গ) ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের উত্তর (পরে)             :               মাথা ঝিম ঝিম্ করছে। ঝম্ ঝম্ করে বৃষ্টি পড়ছে।

ক্রিয়ার ভাব / Mood ও ক্রিয়ার প্রকরণ

১. সূর্য অস্ত যাচ্ছে।         ২. এখন বাড়ি যাও।       ৩. সে পড়লে পাশ করত।       ৪. তোমার কল্যাণ হোক।

উপরের বাক্যগুলোতে ক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার বিভিন্ন রীতি প্রকাশ পেয়েছে। ক্রিয়ার যে অবস্থার দ্বারা তা ঘটার ধরন বা রীতি প্রকাশ পায় তাকে ক্রিয়ার ভাব বলে।

ক্রিয়ার ভাব চার প্রকার। যেমন :

১. নির্দেশক ভাব           / Indicative Mood

২. অনুজ্ঞা ভাব             / Imperative Mood

৩. সাপেক্ষ ভাব            / Subjunctive Mood

৪. আকাঙ্ক্ষা প্রকাশক ভাব / Optative Mood

নির্দেশক ভাব

সাধারণ ঘটনা নির্দেশ করলে বা কিছু জিজ্ঞাসা করলে ক্রিয়াপদের নির্দেশক ভাব হয়। যেমন :

ক) সাধারণ নির্দেশক : আমরা বই পড়ি। তারা বাড়ি যাবে।

খ) প্রশ্ন জিজ্ঞাসায়    : আপনি কি আসবেন? সে কি গিয়েছিল?

অনুজ্ঞা ভাব

আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, অনুরোধ, আশীর্বাদ ইত্যাদি সূচিত হলে ক্রিয়াপদের অনুজ্ঞা ভাব হয়। যেমন :

ক) আদেশাত্মক

বর্তমান কালে-চুপ কর।

ভবিষ্যত কালে- তুমি কাল যেও।

খ) নিষেধাত্মক

বর্তমান কালে-অন্যায় কাজ করো না।

ভবিষ্যত কালে-মিথ্যা বলবে না।

গ) অনুরোধসূচক

বর্তমান কালে-ছাতাটা দিন তো ভাই।

ভবিষ্যত কালে-আপনারা আসবেন।

ঘ) উপদেশাত্মক

বর্তমান কালে-মন দিয়ে পড়।

ভবিষ্যত কালে-স্বাস্থ্যের প্রতি দৃষ্টি রেখো।

সাপেক্ষ ভাব

একটি ক্রিয়ার সংঘটন অন্য একটি ক্রিয়ার ওপর নির্ভর করলে, নির্ভরশীল ক্রিয়াকে সাপেক্ষ ভাব ক্রিয়া বলা হয়। যেমন :

ক) সম্ভাবনায়                  : তিনি ফিরে এলে সবকিছুর মীমাংসা হবে। যদি সে পড়ত তবে পাশ করত।

খ) উদ্দেশ্য বোঝাতে          : ভালো করে পড়লে সফল হবে।

গ) ইচ্ছা বা কামনায়          : আজ বাবা বেঁচে থাকলে আমার এত কষ্ট হতো না।

আকাঙ্ক্ষা প্রকাশক ভাব

যে ক্রিয়াপদে বক্তা সোজাসুঝি কোনো ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে তাকে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশক ভাবের ক্রিয়া বলা হয়। যেমন : সে যাক। যা হয় হোক। সে একটু হাসুক। বৃষ্টি আসে আসুক। তার মঙ্গল হোক।

কাল

ক্রিয়া সংঘটনের সময়কে কাল বলে।

১. আমরা বই পড়ি। ‘পড়া’ ক্রিয়াটি এখন অর্থাৎ বর্তমানে সংঘটিত হচ্ছে।

২. কাল তুমি শহরে গিয়েছিলে। ‘যাওয়া’ ক্রিয়াটি পূর্বে অর্থাৎ অতীতে সম্পন্ন হয়েছে।

৩. আগামীকাল স্কুল বন্ধ থাকবে। ‘বন্ধ থাকা’ কাজটি পরে বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে।

সুতরাং বলা যায়, ক্রিয়া বর্তমান, অতীত বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হওয়ার সময় নির্দেশই ক্রিয়ার কাল।

কালের প্রকরণ

এ হিসেবে ক্রিয়ার কাল প্রধানত তিন প্রকার : বর্তমান কাল, অতীত কাল ও ভবিষ্যত কাল

ক্রিয়াপদ : ক্রিয়ামূল অর্থাৎ ধাতুর সঙ্গে কাল সময় ও পুরুষ জ্ঞাপক (ক্রিয়া) বিভক্তিযোগে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়।

ক) পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য দেখা যায়। যেমন : আমি যাই। তুমি যাও। আপনি যান। সে যায়। তিনি যান।

    (সাধারণ ভবিষ্যত কালে নাম পুরুষ ও মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ অভিন্ন)

খ) বচনভেদে ক্রিয়ার রূপের কোনো পার্থক্য হয় না। যেমন : আমি (বা আমরা) যাই। তুমি (বা তোমরা) যাও।

    আপনি (বা আপনারা) যান। সে (বা তারা) যায়। তিনি (বা তাঁরা) যান।

গ) সাধারণ, সম্ভ্রামাত্মক, তুচ্ছার্থকভেদে মধ্যম ও নাম পুরুষের ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য হয়ে থাকে। (উত্তম পুরুষে হয় না) যেমন:

                              সাধারণ                 সম্ভ্রমাত্মক             তুচ্ছার্থক/ঘনিষ্ঠার্থক

উত্তম পুরুষ              আমি যাই                      --                              --

মধ্যম পুরুষ              তুমি যাও               আপনি যান                      তুই যা

                            তোমরা যাও           আপনারা যান                   তোরা যা

নাম পুরুষ                  সে যায়                  তিনি যান                    এটা যায়

                              তারা যায়                তাঁরা যান                  এগুলো যায়

ক্রিয়া সংঘটনের প্রধান কাল বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যতকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় :

১. বর্তমান কাল : ক) সাধারণ/নিত্যবৃত্ত বর্তমান   খ) ঘটমান বর্তমান       গ) পুরাঘটিত বর্তমান

২. অতীত কাল :  ক) সাধারণ অতীত              খ) নিত্যবৃত্ত অতীত       গ) ঘটমান অতীত

৩. ভবিষ্যত কাল : ক) সাধারণ ভবিষ্যত           খ) নিত্যবৃত্ত ভবিষ্যত     গ) ঘটমান ভবিষ্যত     ঘ) পুরাঘটিত ভবিষ্যত

সব কালের সংজ্ঞা

যে ক্রিয়া বর্তমানে সাধারণভাবে ঘটে, তার কালকে সাধারণ বর্তমান কাল বলে। যেমন : সে ভাত খায়। আমি বাড়ি যাই।

২. নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল

স্বাভাবিক বা অভ্যস্ততা বোঝালে সাধারণ বর্তমান কালের ক্রিয়াকে নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল বলে। যেমন : সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায়।

৩. ঘটমান বর্তমান কাল

যে কাজ শেষ হয়নি, এখনও চলছে, সে কাজ বোঝানোর জন্য ঘটমান বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যেমন : হাসান বই পড়ছে। নীরা গান গাইছে।

৪. পুরাঘটিত বর্তমান কাল

ক্রিয়া পূর্বে শেষ হলে এবং তার ফল এখনও বর্তমান থাকলে পুরাঘটিত বর্তমান কাল হয়। যেমন : এবার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।

৫. অতীত বা সাধারণ অতীত

বর্তমান কালের পূর্বে যে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে তার সংঘটন কালই অতীত বা সাধারণ অতীত কাল। যেমন : প্রদীপ নিভে গেল।

৬. নিত্যবৃত্ত অতীত কাল

অতীত কালে যে ক্রিয়া সাধারণ অভ্যস্ততা অর্থে ব্যবহৃত হয় তাকে নিত্যবৃত্ত অতীত কাল বলে। যেমন: আমরা তখন রোজ সকালে নদী তীরে ভ্রমণ করতাম।

৭. ক্রিয়ার ঘটমান অতীত কাল 

অতীত কালে যে কাজ চলছিল এবং যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তখনও কাজটি সমাপ্ত হয়নি-ক্রিয়া সংঘটনের এরূপ ভাব বোঝালে ক্রিয়ার ঘটমান অতীত কাল  হয়। যেমন : কাল সন্ধ্যায় বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা তখন বই পড়ছিলাম। বাবা আমাদের পড়াশুনা দেখছিলেন।

৮. পুরাঘটিত অতীত কাল

যে ক্রিয়া অতীতের বহু পূর্বেই সংঘটিত হয়ে গিয়েছে এবং যার পরে আরও কিছু ঘটনা ঘটে গেছে তাকে পুরাঘটিত অতীত কাল বলা হয়। যেমন : সেবার তাকে সুস্থই দেখেছিলাম। কাজটি কি তুমি করেছিলে?

৯. ভবিষ্যত কাল বা সাধারণ ভবিষ্যত কাল

যে ক্রিয়া পরে বা অনাগত কালে সংঘটিত হবে, তার কালকে ভবিষ্যত কাল বা সাধারণ ভবিষ্যত কাল বলে। যেমন : আমরা মাঠে খেলতে যাব। শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে।

১০. ঘটমান ভবিষ্যত

যে কাজ ভবিষ্যত কালে চলতে থাকবে তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যত কাল বলে।

১১. পুরাঘটিত ভবিষ্যত কাল

যে ক্রিয়া সম্ভবত ঘটে গিয়েছে, সাধারণ ভবিষ্যত কালবোধক শব্দ ব্যবহার করে তা বোঝাতে পুরাঘটিত ভবিষ্যত কাল হয়। যেমন : গিয়ে থাকব/ যাইয়া থাকিব।

সাধারণ বর্তমান কাল বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল

স্বাভাবিক বা অভ্যস্ততা বোঝালে সাধারণ বর্তমান কালের ক্রিয়াকে নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল বলে। যেমন : সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায়। (স্বাভাবিকতা)। আমি রোজ সকালে বেড়াতে যাই। (অভ্যস্ততা)। নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ।

* স্থায়ী সত্য প্রকাশে : চার আর তিনে সাত হয়।

* ঐতিহাসিক বর্তমান : অতীতের কোনো ঐতিহাসিক ঘটনায় যদি নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালের প্রয়োগ হয় তাহলে তাকে

   ঐতিহাসিক বর্তমান কাল বলে। যেমন : বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন দিল্লি¬র সিংহাসনে আরোহন করেন।

* কাব্যের ভণিতায় : মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম দাস তনে শুনে পূণ্যবান।

* অনিশ্চয়তা প্রকাশে : কে জানে দেশে আবার সুদিন আসবে কি না। ‘যদি’, ‘যখন’, ‘যেন’ প্রভৃতি শব্দের প্রয়োগে অতীত ও ভবিষ্যত কাল জ্ঞাপনের জন্য সাধারণ বর্তমান কালের ব্যবহার হয়। যেমন : বৃষ্টি যদি আসে, আমি বাড়ি চলে যাব। সকলেই যেন সভায় হাজির থাকে। বিপদ যখন আসে তখন এমনি করেই আসে।

সাধারণ বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ

* অনুমতি প্রার্থনায় (ভবিষ্যত কালের অর্থে)                         : এখন তবে আসি।

* প্রাচীন লেখকের উদ্ধৃতি দিতে (অতীত কালের অর্থে)           : চণ্ডীদাস বলেন, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।

* বর্ণিত বিষয় প্রত্যক্ষীভূত করতে (অতীতের স্থলে)                : আমি দেখেছি, বাচ্চাটি রোজ রাতে কাঁদে।

* ‘নাই’, ‘নাই’ বা ‘নি’ শব্দযোগে অতীত কালের ক্রিয়ায়          : তিনি গতকাল হাটে যাননি।

ঘটমান বর্তমান কাল

যে কাজ শেষ হয়নি, এখনও চলছে, সে কাজ বোঝানোর জন্য ঘটমান বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যেমন : হাসান বই পড়ছে। নীরা গান গাইছে।

ঘটমান বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ

* বক্তার প্রত্যেক উক্তিতে ঘটমান বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যেমন : বক্তা বললেন, ‘শত্রুর অত্যাচারে দেশ আজ বিপন্ন, ধন-সম্পদ লুণ্ঠিত হচ্ছে, দিকে দিকে আগুন জ্বলছে।’

* ভবিষ্যত সম্ভাবনা অর্থে : চিন্তা করো না, কালই আসছি।

পুরাঘটিত বর্তমান কাল

ক্রিয়া পূর্বে শেষ হলে এবং তার ফল এখনও বর্তমান থাকলে পুরাঘটিত বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যেমন : এবার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এতক্ষণ আমি অঙ্ক করেছি।

সাধারণ অতীত

বর্তমান কালের পূর্বে যে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে তার সংঘটন কালই সাধারণ অতীত কাল। যেমন : প্রদীপ নিভে গেল। শিকারি পাখিটিকে গুলি করল।

সাধারণ অতীতের বিশিষ্ট ব্যবহার

* পুরাঘটিত বর্তমান স্থলে : ‘এক্ষণে জানিলাম, কুসুমে কীট আছে।’

* বিশেষ ইচ্ছা অর্থে বর্তমান কালের পরিবর্তে : তোমরা যা খুশি কর, আমি বিদায় হলাম।

নিত্যবৃত্ত অতীত

অতীত কালে যে ক্রিয়া সাধারণ অভ্যস্ততা অর্থে ব্যবহৃত হয় তাকে নিত্যবৃত্ত অতীত কাল বলে। যেমন: আমরা তখন রোজ সকালে নদী তীরে ভ্রমণ করতাম।

নিত্যবৃত্ত অতীতের বিশিষ্ট ব্যবহার

* কামনা প্রকাশে : আজ যদি সুমন আসত, কেমন মজা হতো।

*  অসম্ভব কল্পনায়            : সাতাশ হতো যদি একশ সাতাশ।

ঘটমান অতীত কাল

অতীত কালে যে কাজ চলছিল এবং যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তখনও কাজটি সমাপ্ত হয়নি-ক্রিয়া সংঘটনের এরূপ ভাব বোঝালে ক্রিয়ার ঘটমান অতীত কাল হয়। যেমন : কাল সন্ধ্যায় বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা তখন বই পড়ছিলাম। বাবা আমাদের পড়াশুনা দেখছিলেন।

পুরাঘটিত অতীত কাল

যে ক্রিয়া অতীতের বহু পূর্বেই সংঘটিত হয়ে গিয়েছে এবং যার পরে আরও কিছু ঘটনা ঘটে গেছে তার কালকে পুরাঘটিত অতীত কাল বলা হয়। যেমন : সেবার তাকে সুস্থই দেখেছিলাম। কাজটি কি তুমি করেছিলে?

* অতীতে সংঘটিত ঘটনার নিশ্চিত বর্ণনায় : পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে এক লক্ষ সৈন্য মারা গিয়েছিল। আমি সমিতিতে সেদিন পাঁচ টাকা নগদ দিয়েছিলাম।

* অতীতে সংঘটিত ক্রিয়ার পরম্পরা বোঝাতে শেষ ক্রিয়াপদে পুরাঘটিত অতীত কালের প্রয়োগ হয়। যেমন : বৃষ্টি শেষ হওয়ার পূর্বেই আমরা বাড়ি পৌঁছেছিলাম।

সাধারণ ভবিষ্যত কাল

যে ক্রিয়া পরে বা অনাগত কালে সংঘটিত হবে, তার কালকে সাধারণ ভবিষ্যত কাল বলে। যেমন : আমরা মাঠে খেলতে যাব। শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে।

সাধারণ ভবিষ্যত কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ

* আক্ষেপ প্রকাশে অতীতের স্থলে ভবিষ্যত কাল ব্যবহার হয়। যেমন : কে জানত, আমার ভাগ্য এমন হবে? সেদিন কে জানত যে ইউরোপে আবার মহাযুদ্ধের ভেরি বাজবে?

* অতীত কালের ঘটনা সম্পর্কিত যে ক্রিয়াপদে সন্দেহের ভাব বর্তমান থাকে, তার বর্ণনায় সাধারণ ভবিষ্যত কালের ব্যবহার হয়। যেমন: ভাবলাম, তিনি এখন বাড়ি গিয়ে থাকবেন। তোমরা হয়তো ‘বিশ্বনবি’ পড়ে থাকবে।

ঘটমান ভবিষ্যত ক্রিয়ার রূপ

* নাম পুরুষ সাধারণ         :               -ইতে থাকিবে/-তে থাকবে। (করিতে থাকিবে/করতে থাকবে)।

* নাম পুরুষ ও মধ্যম পুরুষ:           -ইতে থাকিবেন/ -তে থাকবেন। (করিতে থাকিবেন/করতে থাকবেন)। (সম্ভ্রমাত্মক)

* মধ্যম পুরুষ সাধারণ     :               -ইতে থাকিবে/ -তে থাকবে। (করিতে থাকিবে/করতে থাকবে)।

* মধ্যম পুরুষ তুচ্ছার্থক    :               -ইতে থাকিবি/-তে থাকবি। (করিতে থাকিবি/করতে থাকবি)।

* উত্তম পুরুষ      :               -ইতে থাকিব/-তে থাকব। (করিতে থাকিব/করতে থাকব)।

যে কাজ ভবিষ্যত কালে চলতে থাকবে তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যত কাল বলে।

লক্ষ করার বিষয়, এখানে মূল ক্রিয়ার সঙ্গে অসমাপিকা ক্রিয়ার -ইতে/-তে বিভক্তি যুক্ত হয় এবং সেই সঙ্গে থাক্ ধাতুর, সাধারণ ভবিষ্যত কালের ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য বা জ্ঞাতব্য : মূল ধাতুর সঙ্গে-ইতে/বিভক্তি যোগে যে অসমাপিকা ক্রিয়া সৃষ্টি হয় তা অপরিবর্তনীয় এবং কোনো কালবাচক নয়। মূল ধাতুর সঙ্গে ভবিষ্যত কালের কোনোরূপ ক্রিয়াবিভক্তিই যুক্ত হয় না। অর্থের দিক থেকে ঘটমান ভবিষ্যতের ক্রিয়াপদ সৃষ্টি হয়েছে মনে করা যেতে পারে। রূপের দিক থেকে এগুলো সাধারণ ভবিষ্যতের ক্রিয়ার রূপ মাত্র। তাই অনেকে ঘটমান ভবিষ্যতের ক্রিয়াপদের রূপ আছে বলে স্বীকার করেন না।

পুরাঘটিত ভবিষ্যত ক্রিয়ার রূপ

যে ক্রিয়া সম্ভবত ঘটে গিয়েছে, সাধারণ ভবিষ্যত কালবোধক শব্দ ব্যবহার করে তা বোঝাতে পুরাঘটিত ভবিষ্যত কাল হয়।

পুরাঘটিত ভবিষ্যত কালের অর্থ প্রকাশের জন্য মূল ধাতুর সঙ্গে অসমাপিকা ক্রিয়াবিভক্তি-ইয়া/এ যোগ করে এবং যাক্ ও গম্ ধাতুর সঙ্গে সাধারণ ভবিষ্যতের ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত করে যৌগিক ক্রিয়াপদ  তৈরি হয়। যেমন : গিয়ে থাকব/ যাইয়া থাকিব।

অনুজ্ঞা পদ

ক) কাল একবার এসো।

খ) তুই বাড়ি যা।

গ) ক্ষমা কর  মোর অপরাধ।

ওপরের বাক্যগুলোর প্রথম বাক্যে অনুরোধ, দ্বিতীয় বাক্যে আদেশ এবং তৃতীয় বাক্যে প্রার্থনা বোঝাচ্ছে। আদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, প্রার্থনা অনুনয় প্রভৃতি অর্থে বর্তমান এবং ভবিষ্যত কালে মধ্যম পুরুষে ক্রিয়াপদের যেরূপ হয় তাকে অনুজ্ঞা পদ বলে।

অনুজ্ঞা পদের গঠন

১. মধ্যম পুরুষের তুচ্ছার্থক বা ঘনিষ্ঠার্থক সর্বনামের অনুজ্ঞায় ক্রিয়াপদে কোনো বিভক্তি যোগ হয় না। মূল ধাতুটিই ক্রিয়াপদ রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন : মধ্যম পুরুষ তুচ্ছার্থক বা ঘনিষ্ঠার্থক তুই (বই) পড়। তোরা (বই) পড়। কিন্তু অনুরোধ, আদেশ বা অনুরূপ অর্থে সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের সর্বনাম ‘আপনি’ বা ‘আপনারা’ এবং সাধারণ মধ্যম পুরুষের সর্বনাম ‘তুমি’ বা ‘তোমরা’ পদের সঙ্গে যে অনুজ্ঞা পদের ব্যবহার হয় তাতে বিভক্তি যুক্ত থাকে। যেমন :

ক) সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষ-আপনি (আপনারা) আসুন (আস্+উন)

খ) সাধারণ মধ্যম পুরুষ-তুমি (তোমরা) আস (আস্+অ)

২. প্রাচীন বাংলারীতিতে মধ্যম পুরুষের অনুজ্ঞায় ক্রিয়ার সঙ্গে ‘হ’ যোগ করার নিয়ম ছিল। এই ‘হ’ বর্তমানে অ, ও-তে রুপান্তরিত হয়েছে। যেমন :

ক) করহ [=কর] আপন কাজ, তাতে কিবা ভয় লাজ।

খ) অধম সন্তানের মাগো দেহ [দাও] পদচ্ছায়া।

৩. ক) উত্তম পুরুষের অনুজ্ঞা পদ হতে পারে না। কারণ কেউ নিজেকে আদেশ করতে পারে না।

    খ) অপ্রত্যক্ষ বলে নাম পুরুষের অনুজ্ঞা হয় না। তবে এই মত সকলে সমর্থন করেন না।

৪. ক) মধ্যম ও নাম পুরুষের বর্তমান অনুজ্ঞার রূপ :

        ধরন                           সর্বনাম                  বিভক্তি      উদাহরণ/ক্রিয়াপদ

১. সম্ভ্রমাত্মক         আপনি, আপনারা, তিনি, তাঁরা       উন, ন          যাউন, যান

২. সাধারণ                       তুমি, তোমরা                 অ, ও      কর, করো, যাও

৩. তুচ্ছার্থক/ঘনিষ্ঠার্থক           তুই, তোরা              ০ (শূন্য)          কর্, যা

৪. সাধারণ                          সে, তারা                  উক             করুক

জ্ঞাতব্য

ক) নির্দেশক ভাবের সাধারণ বর্তমান কালের সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের বিভক্তি=এন। যেমন : আপনি দেখেন।

     সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের অনুজ্ঞা পদের বিভক্তি-‘উন’। যেমন : আপনারা দেখুন।

খ) চলতি ভাষায় ধাতুর মূল স্বর এ-কারান্ত বা ও-কারান্ত হলে উক্ত পার্থক্য লোপ পায়। যেমন: নাই, লন, নিন<লউন, লোন।

গ) মধ্যম ও নাম পুরুষে ভবিষ্যত কালের অনুজ্ঞার রূপ।

   ধরন                             সর্বনাম                     বিভক্তি                      ক্রিয়াপদ   

সম্ভ্রমাত্মক                   আপনি, আপনারা,        -ইবেন   - বেন       করিবেন (সাধু), করবেন (চলিত)

                                তিনি, তাঁরা                                                          

সাধারণ                      তুমি, তোমরা               - ইও      -ও             করিও (সাধু), করো (চলিত)

তুচ্ছার্থক/ঘনিষ্ঠার্থক          তুই, তোরা                -ইস        -স                 করিস, খাইস, খাস

সাধারণ                          সে, তারা                - ইবে     -বে                    করিবে   করবে

দ্রষ্টব্য : ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞা এবং ঘটমান ভবিষ্যত অনুজ্ঞা

ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞা ও ঘটমান ভবিষ্যত অনুজ্ঞা

মূল ক্রিয়াপদের সঙ্গে -ইতে/-তে বিভক্তি যুক্ত হয়ে অসমাপিকা ক্রিয়াপদ গঠন করা যায়। এই অসমাপিকা ক্রিয়াপদ এবং থাক্ ধাতুর সঙ্গে (সাধারণ) বর্তমান অনুজ্ঞার বিভক্তি যুক্ত করে যে ক্রিয়াপদ হয়, উভয়ে মিলে যৌগিক ক্রিয়া উৎপন্ন করে। এই যৌগিক ক্রিয়া ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার অর্থ প্রকাশ করে। যেমন :

(সে)-ইতে/ -তে+-উক                     : করিতে/করতে থাকুক

(তিনি/আপনি) -ইতে/-তে+উন          : করিতে/করতে থাকুন

(তুমি)-ইতে/ -তে+-অ-ও                  : করিতে/করতে থাক/থাকো

(তুই)-ইতে/ -তে+-অ-ও                   : করিতে/করতে থাক্

মূল ধাতুর সঙ্গে অসমাপিকা ক্রিয়াবিভক্তি-ইতে/-তে যুক্ত হয়; এরূপ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়া সর্বদা অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকে। এই অসমাপিকা ক্রিয়া এবং সাধারণ বর্তমানের অনুজ্ঞার ক্রিয়াবিভক্তিযুক্ত থাক্ ধাতু (ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার) মিলে যৌগিক ক্রিয়া উৎপন্ন করে। এই যৌগিক ক্রিয়া ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার অর্থ প্রকাশ করে।

থাক্ ধাতুর সঙ্গে যুক্ত ক্রিয়াবিভক্তিগুলোই অনুজ্ঞা অর্থ প্রকাশ করে। মূল ক্রিয়া থেকে উৎপন্ন অসমাপিকা ক্রিয়াটি ঘটমানতা প্রকাশে সাহায্য করে।

ঘটমান ভবিষ্যত অনুজ্ঞার

উপযুক্ত কারণেই ঘটমান ভবিষ্যত অনুজ্ঞার জন্য পৃথক ক্রিয়াবিভক্তির অস্তিত্ব স্বীকার করা অনাবশ্যক। যেমন :

-ইতে/-তে+-ইবেন/-বেন                   : করিতে থাকিবেন/করতে থাকবেন

-ইতে/-তে+ইও- এ/-ও                     : করিতে থাকিও/করতে থেকো

-ইতে/-তে+-ইস                             : করিতে থাকিস/করতে থাকিস

- ইতে/-তে+- ইবে/-বে                     : করিতে থাকিবে/করতে থাকবে

বিশেষ দ্রষ্টব্য বা জ্ঞাতব্য

ক) ভবিষ্যত কালের অনুজ্ঞায় উত্তম পুরুষ ব্যবহৃত হয় না।

খ) সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের সাধারণ ভবিষ্যতের ক্রিয়ার রূপটি সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের ভবিষ্যত অনুজ্ঞায় ব্যবহৃত হয়।

ক) বর্তমান কাল

আদেশ   :   কাজটি করে ফেল। তোমরা এখন যাও।

উপদেশ  :  সত্য গোপন করো না। কড়া রোদে ঘোরাফেরা করিস না। ‘পাতিস নে শিলাতলে পদ্মপাতা।’

অনুরোধ :  আমার কাজটি এখন কর। অঙ্কটা বুঝিয়ে দাও না।

প্রার্থনা   :    আমার দরখাস্তটা পড়ুন।

অভিশাপ :   মর, পাপিষ্ঠ

খ) ভবিষ্যত কালের অনুজ্ঞা

আদেশে                :               সদা সত্য বলবে।

সম্ভাবনায়              :               চেষ্টা কর, সবই বুঝতে পারবে।

বিধান অর্থে            :               রোগ হলে ওষুধ খাবে।

অনুরোধে               :               কাল একবার এসো (বা আসিও বা আসিবে)।

ক্রিয়াবিভক্তি-সাধু ও চলিত

আমি যাই।

আপনারা যাবেন।

সে যাচ্ছে।

তাঁরা যাচ্ছিলেন।

ওপরে যা-ধাতুর সঙ্গে ‘ই’, ‘বেন’, ‘চ্ছে’ ও ‘চ্ছিলেন’ বিভক্তি যুক্ত করে সমাপিকা ক্রিয়াপদগুলো গঠিত হয়েছে। ধাতুর উত্তর যেসব বর্ণ ও বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করে তাদের ক্রিয়াবিভক্তি বলা হয়।

১. বিভক্তিসমূহ ক্রিয়ার কাল, পুরুষ ও বাচ্যভেদে বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে। যেমন :

আমি যাই-সাধারণ বর্তমান কালে উত্তম পুরুষের ক্রিয়াপদ।

আপনারা যাবেন- সাধারণ ভবিষ্যত কালে (সম্ভ্রমাত্মক) মধ্যম পুরুষের ক্রিয়াপদ।

২. সাধু ও চলিত রীতিভেদেও ক্রিয়াবিভক্তির পরিবর্তন হয়। যেমন :

                           সাধু                              চলিত

আপনি ভাত খাইয়াছেন।        আপনি ভাত খেয়েছেন। 

তাহারা বাড়ি যাইতেছে।        তারা বাড়ি যাচ্ছে।

৩. প্রযোজক ক্রিয়াতেও ক্রিয়াবিভক্তির অনুরূপ পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন :

সাধু রীতি (প্রযোজক)                              চলিত রীতি (প্রযোজক)

আমি তাহাকে দিয়া কাজটি করাইয়াছি।             আমি তাকে দিয়ে কাজটি করিয়েছি।

রত্না মণিকে গান শিখাইতেছিল।               রত্না মণিকে গান শেখাচ্ছিল।

ধাতুর গণ

‘গণ’ শব্দের অর্থ শ্রেণি। কিন্তু ধাতুর ‘গণ’ বলতে ধাতুগুলোর বানানের ধরন বোঝায়। ‘ধাতুর গণ’ ঠিক করতে দুটি বিষয় লক্ষ রাখতে হয়। যেমন :

ক) ধাতুটি কয়টি অক্ষরে গঠিত?

খ) ধাতুর প্রথম বর্ণে সংযুক্ত স্বরবর্ণটি কী?

‘হওয়া’ ক্রিয়ার ধাতু ০ হ (হ্+অ) ‘হ’ একাক্ষর ধাতু এবং প্রথম বর্ণ হ্-এর সাথে স্বরবর্ণ ‘অ’ যুক্ত আছে। সুতরাং হ-আদিগণের মধ্যে ল-ধাতু (ক্রিয়াপদ- লওয়া) পড়বে।

বাংলা ভাষার সমস্ত ধাতুকে ২০টি গণে ভাগ করা হয়েছে। যেমন :

১. হ        - আদিগণ             :               হ (হওয়া), ল (লওয়া)

২. খা      - আদিগণ             :               খা (খাওয়া), ধা (ধাওয়া), পা (পাওয়া), যা (যাওয়া)

৩. দি      - আদিগণ             :               দি (দেওয়া), নি (নেওয়া)

৪. শু       - আদিগণ             :               চু (চোঁয়ানো), নু (নোয়ানো), ছু (ছোঁয়া)

৫. কর্       - আদিগণ           :              কর্ (করা), কম্ (কমা), গড় (গড়া), চল্ (চলা)

৬. কহ্    - আদিগণ             :               কহ্ (কহা), সহ্ (সহা), বহ্ (বহা)

৭. কাট্   - আদিগণ             :               গাঁথ্, চাল, আক্, বাঁধ্, কাঁদ্

৮. গাহ্   - আদিগণ             :               চাহ্, বাহ্, নাহ্ (নাহান < স্নান)

৯. লিখ্  - আদিগণ             :               কিন্, র্ঘি, জিত্, র্ফি, ভিড়্, চিন্

১০. উঠ্ - আদিগণ             :               উড়, শুন্, ফুট্, খুঁজ, খুল, ডুব্, তুল্

১১. লাফা             - আদিগণ             :               কাটা, ডাকা, বাজা, আগা (অগ্রসর হওয়া)

১২. নাহা               - আদিগণ             :               গাহা

১৩. ফিরা              - আদিগণ             :               উচা, লুকা, কুড়া (কুড়াচ্ছে)

১৪. ঘুরা                - আদিগণ             :               ছিটা, শিখা, ঝিমা, চিরা

১৫. ধোয়া             - আদিগণ             :               শোয়া, খোঁচা, খোয়া, গোছা, যোগা

১৬. দৌড়া            - আদিগণ             :               পৌছা, দৌড়া

১৭. চটকা              - আদিগণ             :               সমঝা, ধমকা, কচলা

১৮. বিগড়া             - আদিগণ             :               হিঁচড়া, ছিটড়া, সিটকা

১৯. উল্টা             - আদিগণ             :               দুমড়া, মুচড়া, উপচা

২০. ছোবলা         - আদিগণ             :               কোঁচকা, কোঁকড়া, কোদলা

ধাতুর বিভক্তি রূপ

প্রযোজক ধাতুর চলিত রূপ সাধনে কখনো কখনো মূল ধাতুর সঙ্গে শুধু প্রযোজক রূপটি যুক্ত হয়। যেমন : শিক্ষক ছাত্রটিকে পড়াইয়াছেন। সাধু রূপ।

sqrtপড়্+আ=পড়া (প্রযোজক ধাতু)+ইয়াছেন (বিভক্তি)। শিক্ষক ছাত্রটিকে পড়িয়েছেন-চলিত রূপ।

sqrtপড়্+০ (অর্থ্যাৎ প্রযোজক-প্রকরণের আ যুক্ত হলো না) +ইয়েছেন=পড়িয়েছেন-চলিত রূপ।

চলিত রূপে আরও কয়েকটি ধাতুর পরিবর্তন লক্ষণীয়-

হ-ধাতু                 :               দাঁড়াও, তোমাকে হওয়াচ্ছি।

শিখ্-ধাতু              :               কে তোমাকে গান  শেখাচ্ছে?

শুন্-ধাতু                :               এ কী কথা শোনালি রে।

ধাতুর চলিত রূপ সাধনে কতিপয় পরিবর্তন

১. মূলস্বর অ-কারান্ত

    কহ্ ধাতু : কইতাম, কইলাম, কইতি, কইতিস, কয়েছিস

২. মূলস্বর আ-কারান্ত

ক) খা-ধাতু           : খেলাম (খাইলাম), খেলেন (খাইলেন), খেল, খেলে, (খাইল) খেয়েছে

খ) যা- ধাতু           : গেল (যাইল), গিয়েছিল, যেত-যেতো (যাইত), যেতেছিল, যাচ্ছিল (যাইতেছিল)

গ) গাহ্ (গৈ)-ধাতু                : (চলিত রূপ)-গাইত, গাইলাম, গেয়েছি, গেয়েছিলাম, গেয়েছ, গাইলে, গাইতিস, গাইছিস,

                       গাইবে, গাবে, গাইব, গাব

৩. মূলস্বর ই বা ঈ-কারান্ত : শিখ্ ধাতু (চলিত রূপ)- শেখো, শেখেন, শেখে (শিখে), শিখিস, শিখলাম, শেখ

৪. মূলস্বর উ-কারান্ত         : শুন্ ধাতু- শোনো, শোনেন, শোনে, শুনলাম, শুনেছি, শুনতাম, শুনেছিস, শোনাও

৫. মূলস্বর এ-কারান্ত         : দে, (দি) ধাতু-দিই, দেয়, দেন, দিন, দাও, দিলাম, দিয়েছিলাম, দিতাম (দিতুম), দেব

                                  (দেবো), দিচ্ছে, দিচ্ছিলুম, দাও, দে, দিন, দিক, দিয়ো (দিবো)

৬. মূলস্বর ও-কারান্ত : ধো-ধাতু =ধোয়, ধোন, ধোও, ধুচ্ছিস, ধুইবি, ধুয়েছিস, ধোস।

                             বাকি সবগুলো উ-কার যুক্ত ধাতুর রূপের ন্যায়।

প্রযোজক ধাতুর চলিত রূপ সাধনে কয়েকটি পরিবর্তন

বন্ধনীর মধ্যে সাধু রূপটিও দেখানো হলো :

ক) মূলস্বর অ-কারান্ত

‘হ’-হইয়েছে (হওয়াইয়াছে), হইয়েছিস (হওয়াইয়াছিস), হইয়েছিলুম (হওয়াইয়াছিলাম), হওয়াচ্ছি (হওয়াইতেছি), হয়ায়ো (হওয়াইও)

খ) মূলস্বর ই-ঈ-কারান্ত

হলে প্রযোজক ধাতুর চলিত রূপ কখনো ই-কারান্ত এবং কখনো এ-কারান্ত হয়। যেমন : (সাধু) শিখ>(চলিত) শেখ (ধাতু)

রূপ সাধন

শিখাই-শেখাই-শিখুই      শেখাও-শিখোও     শেখালুম-শিখোলুম     শেখালে-শিখোলে             শেখাতুম-শিখোতুম

শেখাতিস-শিখেতিস       শেখাত-শিখোতো    শেখাবি-শিখোবি      শিখাচ্ছি-শিখেচ্ছি (শিখাচ্ছি)   শেখাচ্ছে-শিখুচ্ছে

শেখাচ্ছিল-শিখেচ্ছিল      শেখাও-শেখোও       শেখ-শিখো

গ) মূলস্বর উ-কারান্ত

এর দুটো রূপ দেখা যায়। বন্ধনীর মধ্যে দ্বিতীয় রূপটিও দেখানো হলো।

শুন-ধাতুর রূপ সাধন

শুনাই (শোনাই)       শোনাও (শুনোও)            শুনান (শুনোন)শোনায় (শুনোয়)      শুনানি (শুনোনি)  শুনালুম (শুনোলুম)

শোনাতুম (শুনোতুম)  শোনাতিস (শুনেতিস-শুনোতিস-শুনুতিস) শোনাব (শুনোব)            শোনাচ্ছ (শুনাচ্ছ) শোনাও (শোনোও) (শোনোও) শোনাস (শুনোস)

বাক্য গঠন :

আহা! কী হওয়াটাই না তুমি হওয়ালে।             দাঁড়াও তোমাকে শেখাচ্ছি।        তুই আর আমাকে কী শিখুবি?

রোজ তোমাকে কত রূপকথা শোনাই।              কী কথা শুনালি মোরে।            ওকে তুমি কী শুনাচ্ছ?

কয়েকটি অসম্পূর্ণ ধাতু

বাংলা ভাষায় কয়েকটি ধাতুর সকল কালের রূপ পাওয়া যায় না। সাধারণ সহকারী ক্রিয়া গঠনে এদের কয়েকটি রূপ পাওয়া যায় মাত্র। যেমন :

১. আ-আইল>এল। আইলেন>এলেন। আইলে>এলে। আইলি>এলি। আইলাম>এলাম। আয় (অনুজ্ঞা)

২. আছ্ -(বর্তমান কালে) : আছে, আছেন, আছ, আছিস, আছি। (অতীত কালে) ছিল, ছিলেন, ছিলে, ছিলি, ছিলাম

৩. নহ্ ধাতু-(বর্তমান কালে) : নন, নহে, নহেন>নন, নহ, নও, নহস, নহিস, নস, নহি, নই

৪. বট্ ধাতু- (বর্তমান কালে) : বটে, বটেন, বট, বটিস, বটি।

৫. থাক্ (রহ্) ধাতু (বর্তমান কালে) : থাকে, থাকেন, রহেন, থাক, (রও), থাকিস, (রস, রোস, রহিস), থাকি (রই), থাকে (রয়)

অতীত কাল : রহিত (রইত), রহিতেন (রইতেন), রহিতাম (রইতাম-রইতুম) ইত্যাদি।

ভবিষ্যত কাল : রহিবে, (রইবে, রবে), রহিবেন (রইবেন), রহিবি (রইবি), রহিব (রইবো), রহিস (রোস, রোসো)।

বাক্য গঠন :

কোথাকার জাদুকর এলি এখানে।       আইল রাক্ষসকুল প্রভঞ্জন বেগে।              কেমন আছিস?         কোথায় ছিলি?

সে ব্যক্তিটি তুমি নও।                  একা দেখি কুলবধূ, কে বট আপনি?           আজি ঘরে একলাটি পারবো না রইতে।

রোসো, তোমাকে মজা দেখাচ্ছি।       হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোন খানে।

কারকের সংজ্ঞা, প্রকরণ ও নমুনা

‘কারক’ শব্দটির অর্থ- যা ক্রিয়া সম্পাদন করে।

বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে।

কারক ছয় প্রকার :

১. কর্তৃকারক     ২. কর্ম কারক    ৩. করণ কারক ৪. সম্প্রদান কারক    ৫. অপাদান কারক    ৬. অধিকরণ কারক

একটি বাক্যে ৬টি কারকের নমুনা : একটি বাক্যে ছয়টি কারকের উদাহরণ : বেগম সাহেবা প্রতিদিন ভাঁড়ার থেকে নিজ হাতে গরিবদের চাল দিতেন। এখানে-

১.            বেগম সাহেবা      -              ক্রিয়ার   সঙ্গে        কর্তৃসম্বন্ধ

২.           চাল                   -                   ’’             ’’      কর্ম সম্বন্ধ

৩.           হাতে                  -              ’’             ’’             করণ সম্বন্ধ

৪.           গরিবদের             -              ’’             ’’             সম্প্রদান সম্বন্ধ

৫.           ভাঁড়ার থেকে         -              ’’             ’’             অপাদান সম্বন্ধ

৬.           প্রতিদিন                -              ’’             ’’            অধিকরণ সম্বন্ধ

বিভক্তির সংজ্ঞা ও প্রকরণ

বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের অন্বয় সাধনের জন্য শব্দের সঙ্গে যে সকল বর্ণ যুক্ত হয় তাদের বিভক্তি বলে। যেমন : ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। বাক্যটিতে ছাদে (ছাদ+এ বিভক্তি), মা (মা+০ বিভক্তি), শিশুকে (শিশু+কে বিভক্তি), চাঁদ (চাঁদ+০ বিভক্তি) ইত্যাদি পদে বিভিন্ন বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ক স্থাপন করেছে। বিভক্তি চিহ্ন স্পষ্ট না হলে সেখানে শূন্যবিভক্তি আছে মনে করা হয়।

বিভক্তি ২ প্রকার। যেমন : শব্দবিভক্তি বা নামবিভক্তি ও ক্রিয়াবিভক্তি

বাংলা শব্দবিভক্তি বা নামবিভক্তি

০ শূন্য বিভক্তি (অথবা অ-বিভক্তি), এ, (য়), তে (এ), কে (রে), র, (এরা)- কয়টিই খাঁটি বাংলা শব্দবিভক্তি। এছাড়া বিভক্তি স্থানীয় কয়েকটি অব্যয় শব্দ কারক-সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন : দ্বারা, দিয়ে, হতে, থেকে ইত্যাদি।

বাংলা শব্দবিভক্তি সাত প্রকার : প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী এবং সপ্তমী।

একবচন এবং বহুবচন ভেদে বিভক্তিগুলোর আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়। যেমন :

বিভক্তির আকৃতি

   একবচন                                               বহুবচন

প্রথমা :  ০, অ, এ, (য়), তে, এতে    রা, এরা, গুলি (গুলো), গণ

দ্বিতীয়া : ০, অ, কে, রে (এরে), এ, য়, ত্        দিগে, দিগকে, দিগেরে, *দের

তৃতীয়া : ০, অ, এ, তে, দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক       দিগের দিয়া, দের দিয়া, দিগকে দ্বারা, দিগ

                                কর্তৃক, গুলির দ্বারা, গুলিকে দিয়ে, *গুলো

                                দিয়ে, গুলি কর্তৃক, *দের দিয়ে

চতুর্থী : দ্বিতীয়ার মতো      দ্বিতীয়ার মতো

পঞ্চমী : এ (য়ে, য়), হইতে, *থেকে, *চেয়ে, *হতে     দিগ হইতে, দের হইতে, দিগের চেয়ে,

                                গুলি হইতে, গুলির চেয়ে, *দের হতে, *দের থেকে, *দের চেয়ে

ষষ্ঠী : র, এর         *দিগের, দের, গুলির, গণের, গুলোর

সপ্তমী : এ, (য়), য়, তে, এতে            দিগে, দিগেতে, গুলিতে, গণে, গুলির মধ্যে, গুলোতে, গুলোর মধ্যে

তারকা চিহ্নিত বিভক্তিগুলো এবং বন্ধনীতে লিখিত শব্দ চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয়

বিভক্তিযোগের নিয়ম

ক) অপ্রাণী বা ইতর প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে ‘রা’ যুক্ত হয় না; গুলি, গুলো যুক্ত হয়। যেমন : পাথরগুলো, গরুগুলি

খ) অপ্রাণিবাচক শব্দের উত্তর ‘কে’ বা ‘রে’ বিভক্তি হয় না, শূন্যবিভক্তি হয়। যেমন : কলম দাও।

গ) স্বরান্ত শব্দের উত্তর ‘এ’ বিভক্তির রূপ হয়- ‘য়’ বা ‘য়ে’। ‘এ’ স্থানে ‘তে’ বিভক্তিও যুক্ত হতে পারে। যেমন : মা+এ=মায়ে, ঘোড়া+এ=ঘোড়ায়, পানি+তে=পানিতে।

ঘ) অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত শব্দের উত্তর প্রায়ই ‘রা’ স্থানে ‘এরা’ হয় এবং ষষ্ঠী বিভক্তির ‘র’ স্থলে ‘এর’ যুক্ত হয়। যেমন:

   লোক+রা=লোকেরা        বিদ্বান (ব্যঞ্জনান্ত)+রা=বিদ্বানেরা        মানুষ+এর=মানুষের লোক+এর=লোকের

কিন্তু অ-কারান্ত, আ-কারান্ত এবং এ-কারান্ত খাঁটি বাংলা শব্দের ষষ্ঠীর এক বচনে সাধারণ ‘র’ যুক্ত হয়, ‘এর’ যুক্ত হয় না। যেমন : বড়র, মামার, ছেলের।

সকল প্রকার কারকের সংজ্ঞা

১. কারক : বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে। যেমন : বেগম সাহেবা প্রতিদিন ভাঁড়ার থেকে নিজ হাতে গরিবদের চাল দিতেন।

২. কর্তৃকারক : বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্তৃকারক বলে। যেমন : মেয়েরা ফুল তোলে।

৩. কর্মকারক : যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্মকারক বলে। যেমন : নাসিমা ফুল তুলছে।

৪. করণ কারক : ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র, উপকরণ বা সহায়ককেই করণ কারক বলে। যেমন : নীরা কলম দিয়ে লেখে।

৫. সম্প্রদান কারক : যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয় তাকে সম্প্রদান কারক বলে। ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। সৎপাত্রে কন্যা দান কর।

৬. অপাদান কারক : যা থেকে কিছু বিচ্যুত, গৃহীত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত ও রক্ষিত হয় এবং যা দেখে কেউ ভীত হয় তাকে অপাদান কারক বলে। যেমন : গাছ থেকে পাতা পড়ে। মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে।

৭. অধিকরণ কারক : ক্রিয়া সম্পাদনের কাল/সময় এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে। যেমন : আমরা রোজ স্কুলে যাই।

৮. ভাবাধিকরণ কারক : যদি কোনো ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অন্য ক্রিয়ার কোনোরূপ ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তবে তাকে ভাবাধিকরণ কারক বলে। যেমন : সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়। কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়।

৯. ঐকদেশিক আধারাধিকরণ : বিশাল স্থানের যে কোনো অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ কারক বলে। যেমন : পুকুরে মাছ আছে।

১০. অভিব্যাপক আধারাধিকরণ : উদ্দিষ্ট বস্তু যদি সমগ্র আধার ব্যাপ্ত করে বিরাজমান থাকে তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ কারক বলে। যেমন : তিলে তৈল আছে। নদীতে পানি আছে।

১১. বৈষয়িক অধিকরণ : বিষয় বিশেষে বা কোনো বিশেষ গুণে কারও কোনো দক্ষতা বা ক্ষমতা থাকলে তাকে বৈষয়িক অধিকরণ কারক বলে। যেমন : রাকিব অঙ্কে কাঁচা কিন্তু ব্যাকরণে ভালো।

১২. কর্তৃকারকের মুখ্যকর্তা : যে নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে মুখ্যকর্তা বলে। যেমন : ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।

১৩. কর্তৃকারকের প্রযোজক কর্তা : মূলকর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায় তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন: শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।

১৪. কর্তৃকারকের প্রযোজ্য কর্তা : মূলকর্তার করণীয় কার্য যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন : রাখাল (প্রযোজক) গরুকে (প্রযোজ্য কর্তা) ঘাস খাওয়ায়।

১৫. কর্তৃকারকের ব্যতিহার কর্তা : কোনো বাক্যে যে দুটো কর্তা একত্রে এক জাতীয় ক্রিয়া সম্পাদন করে তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন : বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। রাজায়-রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত।

কর্তৃকারক

বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্তৃকারক বলে।

ক্রিয়ার সঙ্গে ‘কে’ বা ‘কারা’ যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই কর্তৃকারক। যেমন : খোকা বই পড়ে (কে পড়ে?)। খোকা-কর্তৃকারক। মেয়েরা ফুল তোলে (কারা তোলে?)। মেয়েরা-কর্তৃকারক।

কর্তৃকারকের প্রকারভেদ

ক) কর্তৃকারক বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চার প্রকারের হয়ে থাকে।

১. মুখ্য কর্তা : যে নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে সে মুখ্য কর্তা। যেমন : ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।

২. প্রযোজক কর্তা : মূল কর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায় তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন : শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।

৩. প্রযোজ্য কর্তা : মূল কর্তার করণীয় কার্য  যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলা হয়। ওপরের বাক্যে ‘ছাত্র’ প্রযোজ্য কর্তা। তদ্রুপ- রাখাল (প্রযোজক) গরুকে (প্রযোজ্য কর্তা) ঘাস খাওয়ায়।

৪. ব্যতিহার কর্তা : কোনো বাক্যে যে দুটো কর্তা একত্রে এক জাতীয় ক্রিয়া সম্পাদন করে তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন : বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। রাজায়-রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত।

খ) বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন রকম হতে পারে। যেমন :

১. কর্মবাচ্যের কর্তা (কর্মপদের প্রাধান্যসূচক বাক্যে)                :               পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।

২. ভাববাচ্যের কর্তা (ক্রিয়ার প্রাধান্যসূচক বাক্যে)                  :               আমার যাওয়া হবে না।

৩. কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা (বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয়)             :               বাঁশি বাজে। কলমটা লেখে ভালো।

কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

ক) প্রথমা শূন্য বা অ বিভক্তি   :               রাজু বই পড়ে।

খ) দ্বিতীয়া বা কে বিভক্তি       :               বশিরকে যেতে হবে।

গ) তৃতীয়া বা দ্বারা বিভক্তি     :               ফেরদৌসী কর্তৃক শাহনামা রচিত হয়েছে।

ঘ) ষষ্ঠী বা র বিভক্তি            :               আমার যাওয়া হয়নি।

ঙ) সপ্তমী বা এ বিভক্তি         :               গাঁয়ে।

No comments:

Post a Comment

West Bengal GK পশ্চিম বঙ্গ জিকে Part -03

  * পশ্চিম বঙ্গের প্রথম রাজ্যপালের নাম কি? # রাজাগোপালাচারী চক্রবর্তী। * পশ্চিম বঙ্গের প্রথম মহিলা রাজ্যপালের নাম কি? # শ্রীমতী পদ্মাজা নাইড...